ঢাকা: প্লাস্টিক বর্তমান দুনিয়ার স্থায়িত্ব, কম খরচ ও সহজলভ্যতার কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল ব্যবহৃত একটি উপাদান। এতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করছে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব থেকে প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন ‘ব্যবহৃত প্লাস্টিক’ সংগ্রহ করে। এখান থেকে প্রায় ২৭ হাজার মেট্রিক টন কাঁচামাল উৎপন্ন হয়। আমদানি করলে এ পরিমাণ কাঁচামালের আর্থিক মূল্য প্রায় ৪শ কোটি টাকা। রিসাইক্লিং কার্যক্রম পরিচালনার ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। একইসঙ্গে প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে ভরে যাওয়া থেকে বেঁচে যাচ্ছে ৩০ হাজার একর চাষ যোগ্য জমি। শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জের প্রাণ-আরএফএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবহৃত প্লাস্টিক সংগ্রহ করে রিসাইক্লিং করে তৈরি করছে বালতি, বেলচা, চেয়ার, টুল, বোল, গৃহস্থালি পণ্য, পাইপ ও ফিটিংস, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও খাদ্যপণ্যের প্যাকেজিং। ডিলার, প্লাস্টিক সংগ্রহকারী, ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী, প্লাস্টিক পণ্যের কারখানা ও ডিপো থেকে থেকে এসব ‘ব্যবহৃত প্লাস্টিক’ সংগ্রহ করা হয়। এসব ‘ব্যবহৃত প্লাস্টিক’ মানভেদে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে সংগ্রহ করা হয়।
সংগ্রহের পর ‘ব্যবহৃত প্লাস্টিক’ প্রাণ-আরএফএলের নিজস্ব সংগ্রহকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। সংগ্রহ করা প্লাস্টিকের মধ্যে রয়েছে পিইটি, এইচডিপিই, এলডিপিই, পিপি, পিভিসি, পিএস ও এবিএস প্লাস্টিক সংগ্রহ করে। তবে বেশি সংগ্রহ করে পিইটি, পিপি ও পিভিসি।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০টি সংগ্রহকেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে ‘ব্যবহৃত প্লাস্টিক’ চূর্ণ করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের নিজস্ব কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে হবিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কসহ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের তিনটি কারখানায় প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করা হয়। ব্যবহৃত প্লাস্টিক’ সংগ্রহের পরে প্রসেসিং করে বিন, গার্ডেনিং, গৃহস্থালি, পোল্ট্রি আইটেম ও ব্যাগসহ প্রায় ১শ ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়।
প্রাণ-আরএফএল সূত্রে জানা গেছে, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে থাকে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে গৃহস্থালি পণ্য, পাইপ ও ফিটিংস, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও খাদ্যপণ্যের প্যাকেজিং। গৃহাস্থলি পণ্য ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের শীর্ষস্থানীয় উৎপাদনকারী হিসেবে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের দায়িত্ব রয়েছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা। সে দায়িত্ব থেকেই গ্রুপটি ২০১২ সাল থেকে প্লাস্টিক পণ্য রিসাইক্লিং কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। প্লাস্টিক রিসাইক্লিং খাতে গ্রুপটির এ পর্যন্ত মোট বিনিয়োগ প্রায় ৩২০ কোটি টাকা। তাছাড়া এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার লোকের সরাসরি এবং ৪ হাজার লোকের পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, প্লাস্টিক ও রিসাইক্লিং প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানুষের সচেতনতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানুষ যদি আরো সচেতন হয়, এ শিল্প আরো বিকাশ লাভ করবে এবং পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভার অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রাণ-আরএফএল নানা ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে।
তিনি বলেন, ব্যবহৃত প্লাস্টিক’ নিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ভবিষ্যতে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে গ্রুপটি তার মোট প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রায় ১০ শতাংশ রিসাইক্লিং করে থাকে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গ্রুপটির পরিকল্পনা রয়েছে মোট ব্যবহারের প্রায় ২০ শতাংশ রিসাইক্লিং করা। তাছাড়া খুব শিগগিরই আরো নতুন ১০টি সংগ্রহকেন্দ্র করা হবে। ভবিষ্যতে পণ্যের সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে।
প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪শ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি প্লাস্টিক উৎপাদিত হচ্ছে। এখন দেশে প্রায় ৪ হাজার প্লাস্টিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে প্রায় ২০ লাখের বেশি লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। দেশে প্রতিবছর প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রায় ২৪ লাখ টন। বছরে এর মাথাপিছু ব্যবহার প্রায় ১৫ কেজি। এক্ষেত্রে মাথাপিছু ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পেছনে। বিশ্বে বছরে মাথাপিছু প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় ৬০ কেজি। উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ ও জাপানের মতো উন্নত দেশগুলোতে প্রতিবছর মাথাপিছু ব্যবহার একশ কেজিরও বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
জিসিজি/এএটি