ঢাকা: মহামারী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব না কাটতেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নতুন প্রজন্মের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংক ১১ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।
তাদের মধ্যে দু’জন উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি), তিনজন বিভাগীয় প্রধান ও চারজন শাখা ব্যবস্থাপক রয়েছেন।
মহামারীর মধ্যে দু’জন ডিএমডিসহ ১১ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার লঙ্ঘন। চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকারদের চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যূত করা যাবে না। কোভিডকালীন শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতা বা অদক্ষতার কারণ দেখিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যূত অথবা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা যাবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সার্কুলারে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কিছু ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেছেন, সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও কোভিডকালীন শুধুমাত্র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করা বা অদক্ষতার অজুহাতে তাদের চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে ও চাকরি থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন কঠোর নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে সাউথ বাংলা এগিকালচার অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক ১১ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে। ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন শুধু সাবেক চেয়ারম্যানের এলাকায় বাড়ি হওয়ার কারণে তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো অভিযোগ নেই।
সম্প্রতি ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান হন আব্দুল কাদির মোল্লা। এর আগে ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা থেকে টানা ৯ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন এসএম আমজাদ হোসেন। বেনামে ঋণ নেয়াসহ নানা ঋণ কেলেংকারী, অর্থ পাচারের অভিযোগে পর্ষদের তোপের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।
নতুন চেয়ারম্যান আবদুল কাদির মোল্লা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এসএম আমজাদ হোসেনের এলাকার কর্মীদের মধ্যে ছাটাই আতংক তৈরি হয়েছে। অবশেষে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তার সত্যতাও মিলেছে। যদিও নতুন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়ে কাদির মোল্লা কোনো এলাকা বিশেষের কর্মী ছাটাই হবে না বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে সাউথ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, যেসব অনিয়মের কারণ দেখিয়ে যেসব কর্মকর্তাকে সাময়িক অব্যহতি দেয়া হয়েছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সে সব ঋণ আগেই সমন্বয় হয়েছে অথবা ঋণের পরিমাণ সামন্যই।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন- প্রধান কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল উদ্দীন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিউদ্দীন আহমেদ, হেড অব ব্যাংকিং অপারেশন (এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট) এসএম ইকবাল মেহেদী, ক্রেডিট অ্যাডমিনিট্রেসন বিভাগের প্রধান (এক্সিকিউটিভ ভাইস-প্রেসিডেন্ট) সালাউদ্দিন আহমেদ, ইন্টারন্যাশনাল বিভাগের প্রধান (ভাইস-প্রেসিডেন্ট) এএনএম ময়েজ আহমেদ, খুলনার কেডিএ শাখা প্রধান (ফাস্ট অ্যাসিসটেন্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট) এনএম আবদুল খালেক, খুলনার চুকনগর শাখার প্রধান (অ্যাসিসটেন্ট ভাইস-প্রেসিডেন্ট) মোহা. মনজুরুল আলম, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার খারাবাট বাইনতলা শাখা প্রধান সিনিয়র এক্সিকিউটভি অফিসার এসএম রবিউল আলম, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা শাখা প্রধান সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. নজরুল ইসলাম, খুলনা শাখার বৈদেশিক মূদ্রা বিনিময় বিভাগের ইনচার্জ শেখ আবুল ফারাহ, বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার কাটাখালি শাখার অপারেশন ম্যানেজার (এক্সিকিউটিভ অফিসার) অরুপ কুমার সাহা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬,২০২১
এসই/এমএমজেড