ঢাকা: দেশের ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, সব মানুষের শোভন জীবনমান নিশ্চিত করতে কর্মসংস্থানভিত্তিক প্রবৃদ্ধি জরুরি। তিনি বলেন, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ এবং ব্যবসা বাড়াতে বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (০৭ অক্টোবর) মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ (পিইবি) প্রকাশিত দেশের প্রথম ‘বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স)’ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ সূচক প্রকাশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, উদ্যোক্তাদের জন্য ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ পরিকল্পনা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। তবে এমসিসিআই এবং পিইবির উদ্যোগে সরকারি সংস্থাগুলোর জন্য ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এর ফলে এসডিজি ও ভিশন ২০৪১ অর্জন সহজ হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি বলেন, এই সূচক শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম নয়, সত্যিকার অর্থেই পুরো বাংলাদেশের ব্যবসায়ীক পরিবেশকে তুলে ধরেছে। তিনি আশা করেন, বিশদ ও কার্যকর গবেষণা পদ্ধতির কারণে, এই সূচক শিগগিরই বৈশ্বিক উদ্যোক্তাদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
সূচক প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ক কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাংক তাদের সূচক প্রকাশ বন্ধের ঘোষণা দিলেও দেশের ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে সংস্থাটির কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এমসিসিআই ও পিইবির ব্যবসায়ীক পরিবেশ সূচক তৈরির উদ্যোগ বিডার কার্যক্রমে আরও গতি আনবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হলে, এ দেশের ব্যবসায়ীক পরিবেশের আরও উন্নতি হবে।
এমসিসিসিআই সভাপতি নিহাদ কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন এফআইসিসিআইর সভাপতি রুপালী হক চৌধুরী, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান, বিল্ডের চেয়ারপার্সন ও এফবিসিসিআইর পরিচালক আবুল কাশেম খান, এমসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি আনিস এ. খান এবং বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের বিজনেস কাউন্সিলররা।
প্রথম ‘বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স)’ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের ড. এম মাশরুর রিয়াজ। বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স তৈরিতে ১০টি মানদণ্ড বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলো হলো- ব্যবসা শুরু করা, জমির সহজলভ্যতা, নিয়ন্ত্রণমূলক তথ্যের সহজলভ্যতা, অবকাঠামো, শ্রম বিধি-বিধান, বিরোধ নিষ্পত্তি, সীমান্ত বাণিজ্যের সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তির অভিযোজন ও ঋণের প্রাপ্যতা।
মোট ১’শ পয়েন্টের ভিত্তিতে তৈরি এ সূচকে ব্যবসায়ীক পরিবশকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পয়েন্ট ০-২০ হলে, ব্যবসার পরিবেশ কঠিন, ২১-৪০ হলে, ব্যবসায়ীক পরিবেশে মারাত্বক প্রতিকূলতা রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। পরবর্তী ২০ পয়েন্টের মধ্যে সূচক অবস্থান করলে, জটিল ব্যবসায়ীক পরিবেশ, ৬১-৮০’র মধ্যে সূচক হলে, ব্যবসার পরিবেশ উন্নতির দিকে এবং ৮১-১০০’র মধ্যে সূচক থাকলে, দেশে ব্যবসা সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।
প্রথমবারের মতো তৈরি করা ব্যবসায়ীক পরিবেশ সূচকে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৬১.০১। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশের ব্যবসায়ীক পরিবেশ উন্নতির দিকে, তবে আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২১
এসই/এমআরএ