ঢাকা: দেশের পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। তারপরও আগামী এক মাস পেঁয়াজের দাম বেশি ও নাজুক থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার, অপরিশোধিত সয়াবিন তেল, পাম তেল ও চিনি আমদানিতে শুল্ক হ্রাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে আয়োজিত সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এছাড়া সভায় প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্য সচিব বলেন, পেঁয়াজ, চিনি, তেল ও ডাল এই চার পণ্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ নিয়ে আমাদের দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তিন সপ্তাহ আগে ভোজ্য তেল ও চিনি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তখন চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ভিন্ন, কারণ পেঁয়াজ শতকরা ৮০ ভাগ দেশে উৎপাদন হয়। মাত্র ২০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এর কিছু ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হয়। তবে, সম্প্রতি ভারতে অতি বৃষ্টির জন্যে ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছু বেড়েছে। সেটার প্রভাব দেশের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এজন্য আংশিক দায়ী ভারতের বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং আংশিক আশঙ্কা থেকে যে ভারতে দাম আর বাড়তে পারে বা পেঁয়াজ রপ্তানি যদি বন্ধ করে দেয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। যাতে নিত্যদ্রব্য পণ্য নিয়ে যেসব ট্রাক স্থলবন্দর দিয়ে আসে সেগুলো যে কোথাও আটকে না থাকে।
তপন কান্তি ঘোষ বলেন, বিআইডব্লিউটিএ-কে বলা হয়েছে যেন ফেরি সার্ভিস নিবিঘ্ন রাখা হয়। এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে পেঁয়াজে ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করার জন্য। তেল ও চিনির অগ্রিম ট্যাক্স প্রত্যাহার করার জন্য এনবিআরকে লিখেছিলাম মাসখানেক আগে। এর বাইরেও আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, যেমন মিয়ানমার থেকে আরো বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ আনার জন্য।
তিনি বলেন, দেশে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ আছে। দেশে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর এই সময়ে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় না। আর যেটা হয় সেটা খুবই কম উৎপাদন হয়। যেটা নভেম্বরের শেষের দিকে বাজারে আসবে। তার আগে এক মাস পেঁয়াজের মূল্য বেশি থাকার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এরমধ্যে আমাদের চেষ্টা থাকবে ভারতে যে পরিমাণ বাড়বে সেটা যেন যৌক্তিকভাবে আমাদের এখানে প্রতিফলিত হয়। অতি মুনাফা যেন কেউ নিতে না পারে সে বিষয়ে মন্ত্রী দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনার যে মনিটরিং সেটা যথেষ্ট শক্ত করা হয় সেটা জানিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসককে চিঠি লেখা হয়েছে, স্থানীয় বাজারগুলো মনিটরিং করতে। একইসঙ্গে দ্রব্যমূল্য কেউ বেশি নিচ্ছে কিনা সেটা দেখার জন্য যদি নিয়ে থাকে ভোক্তা অধিকার আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলার হয়েছে।
টিসিবি নিয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন ৪শ ট্রাকে ৩০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৫০ টন পেঁয়াজ বিক্রি করছি। এটা আরো বাড়ানো হয়ে তুরস্ক থেকে আর ১৫ হাজার টন পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে গেছে। কিছু খালাসও হয়েছে। গতকাল আমাদের একটি টেন্ডার হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পেঁয়াজ আনবো। আগামী ১৭ তারিখ আরো একটি টেন্ডার হবে। অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পেঁয়াজও আমদানি করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি আমাদের যে মজুদ পরিস্থিতি আছে তাতে বলা যায় পেঁয়াজের মূল্য পরিস্থিতি এর থেকে আর বেশি খারাপ হবে না। তবে, আগামী এক মাস পেঁয়াজের পরিস্থিতি নাজুক থাকবে। উৎপাদনের দিক থেকে বা ভারতের পরিস্থিতির দিক থেকে বিচার করলে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন গত দুইদিনে পেঁয়াজের দাম ৫ থেকে ৭ টাকা কমেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১,২০২১
জিসিজি/এএটি