ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

রিপাবলিক ইন্সুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী হচ্ছেন ঋণ খেলাপি সহিদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২১
রিপাবলিক ইন্সুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী হচ্ছেন ঋণ খেলাপি সহিদ

ঢাকা: ঋণ খেলাপি ব্যক্তিকে ইন্সুরেন্স কোম্পানি আইনে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার অযোগ্য বলা হলেও রিপাবলিক ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন ঋণ খেলাপি সহিদ-উল-হাসান। তিনি ইনফিনিটি ডাটা অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের পরিচালক।

প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণের পরিমান ১০০ কোটি টাকারও বেশি।

২০১৮ সালের ১০ মার্চ সহিদ-উল-হাসান তিন বছরের জন্য রিপাবলিক ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর কোম্পানি থেকে অবৈধভাবে অর্থ উত্তোলন করে ইনফিনিটি ডাটা অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডে বিনিয়োগ করে পরিচালক হন।

ইনফিনিটি ডাটা অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডকে ৬৮ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ১৭৭ টাকা ঋণ দিয়েছিল আটটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ঋণের স্থিতি দাড়িয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকায়। ঋণের এখন পুরোটাই খেলাপি। টাকা ফেরত পেতে অর্থ ঋণ আদালতে ইনফিনিটি ডাটা অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের নামের মামলা করেছে ব্যাংকগুলো। সহিদ-উল-হাসান কোম্পানির পরিচালক হিসেবে ওই মামলার ৬ নম্বর আসামি।

বিমা করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ঋণ খেলাপি ঘোষণা হলে কোনো ব্যক্তি ইন্সুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তবে বিমা করপোরশেন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইডিআরএর একটি সংঘবদ্ধ চক্র সহিদ-উল-হাসানকে নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আইডিআরএর পর্ষদ সভায় সহিদ-উল-হাসানের নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন এফসিএ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবো।  

ঋণ খেলাপির আইনি অধিকার থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্টও। চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির করা রিট শুনানিতে বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালত বলেন, ঋণখেলাপির কোনো আইনি অধিকার থাকতে পারে না।

রিপাবলিক ইন্সুরেন্স কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১০ মার্চ সহিদ-উল-হাসানের নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ তার আগের মাস ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষর (আইডিআরএ) কাছে সহিদ-উল-হাসানকে আরও তিন বছরের জন্য মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে অনুমোদন চায়। অনুমোদন প্রক্রিয়া আটকে যায় করোনার কারণে সরকার ঘোষিক লকডাউনের মধ্যে। লকডাউন শেষে আবারও কার্যক্রম শুরু হলে আইডিআরএ জানতে পারে সহিদ-উল-হাসান ঋণ খেলাপি। ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে অর্থ ঋণ আদালতে। এ বিষয়ে চলতি বছরের জুন মাসে সহিদ-উল-হাসানের কাছে ব্যাখ্যা চায় আইডিআরএ।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সূত্রে জানা গেছে, ঋণ খেলাপির বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারেননি সহিদ-উল-হাসান। জবাবে তিনি নিজেকে কোম্পানির পরিচালক দাবি করলেও মালিক বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়োগের মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় আটমাস পার হলেও সহিদ-উল-হাসান রিপাবলিক ইন্সুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে বহাল আছেন। বিমা দাবি ও অন্যান্য খরচের জন্য কোম্পানি কোটি কোটি টাকা উত্তোলন করে তিনি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছেন। এতে কোম্পানি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পাবলিক শেয়ার হোল্ডারগণ লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিপাবলিক ইন্সুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী সহিদ-উল-হাসান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বক্তব্য জানার জন্য অফিসে গিয়ে সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২১
এসই/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।