ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

স্বল্প পুঁজি হলেও লাভ ভালো ‘রিং-স্ল্যাবে’!

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২১
স্বল্প পুঁজি হলেও লাভ ভালো ‘রিং-স্ল্যাবে’! ছবি: বাংলানিউজ

মেহেরপুর: পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য মাটির রিং তৈরি করতে কমপক্ষে ১২ হাতের ছোঁয়া লাগে মৃৎশিল্পীদের। মাটি-পানি মিশিয়ে উপযুক্ত কাদা বানানো হয়।

এরপরে নির্ধারিত ছাঁচে রিং বানিয়ে রোদে শুকানোর পর তা পুড়িয়ে করা হয় ব্যবহার উপযোগী।

রিং তৈরির সঙ্গে জড়িত আমতৈল গ্রামের মঞ্জুরী বালা পাল, মঙ্গল পাল, জগা পাল জানালেন, এ ব্যবসা এখন আর সনাতনধর্মী মৃৎশিল্পীদের হাতে নেই, এই গ্রামের শতাধিক মুসলমানরাও জড়িয়ে পড়েছেন এই ব্যবসায়।

মেহেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরে গাংনী উপজেলার আমতৈল গ্রাম। গ্রামে প্রায় তিন হাজার লোকের বসবাস। আমতৈল গ্রামে এখন ছোট বড় ৭২টি ভাটায় তৈরি হচ্ছে রিং স্ল্যাব। আর এরসঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রায় দেড় হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা।

মঙ্গল পাল ও জগা পাল জানান, এক সময় আমতৈল গ্রামে ২৭টি কারখানায় শতাধিক সনাতন ধর্মের পরিবারের লোকজন মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পাল বংশের নারী-পুরুষ সবাই কাদামাটির কাজ করতেন। আমরা নিত্য ব্যবহার্য বাসন পত্র, ফুলের টব, নান্দা, খেলনাসহ কারুকাজ করা শোপিস তৈরি করতাম। বেশ কদরও ছিল। কিন্তু প্লাস্টিকের তৈরি জিনিষের কদর বেড়ে যাওয়ায় মাটির জিনিষের কদর কমতে থাকে। তাই এখন শুধুমাত্র পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য তৈরি হচ্ছে মাটির রিং-স্ল্যাব। এখানকার অনেকেই ভারতে চলে গেছেন। মাত্র কয়েকটি পাল বংশের পরিবার রয়েছেন এখন। তারাই এই ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন।
 
রিং-স্ল্যাব তৈরির কারখানার মালিক ইয়ামিন আলী ও নাজমুল হোসেন জানান, আগে মাঠ থেকেই মাটি সংগ্রহ করা যেত। এখন তা আর সম্ভব হয়না। কিছুদিন আগেও এক ট্রলি মাটি ২০০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮০০-৯০০ টাকা। বছর খানেক আগে এক ট্রলি বাঁশ ও আঁখের পাতার দাম ছিল ১৫০ টাকা। এখন সেই পাতার দাম ৭০০ টাকা। অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়লেও মাটির জিনিসের দাম তেমন বাড়েনি।


 
তিনি জানান, প্রতি জোড়া রিং পাইকারি ৯০-১৪০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে কোনো গ্রাহক কিনলে তার বাড়িতে গর্ত খুঁড়ে বসিয়ে দিয়ে আসা পর্যন্ত একটি রিং ১৫০ টাকা নিয়ে থাকেন।

রিং তৈরির সঙ্গে জড়িত ইয়ামিন হোসেন জানান, পালদের কাছ থেকে কাজ শিখে এখন স্বল্প পুঁজিতে, সহজলভ্য উপকরণ ও ভালো লাভের কারণে এ পেশা বেছে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে রিং তৈরির আশা করছেন এখানকার কারিগররা।
 
তবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত নাসির উদ্দীন জানান, এখানকার অনেকের নিজস্ব জমি না থাকায় কারখানার মালামাল তৈরি ও চুলার জন্য জমি লিজ নিতে হয়। এক বিঘা জমি লিজ নিতে বাৎসরিক ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা দিতে হয়। বছরের মাত্র ৮ থেকে ৯ মাস চলে এ ব্যবসা। অনেকে বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মৃৎশিল্পে বিনিয়োগ করেছেন।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান জানান, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির উন্নয়নের জন্য সরকার দু'টি কর্মসূচি চালু করেছেন সরকার। একটি ভাতা কর্মসূচি অন্যটি ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি। মৃৎশিল্পীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সরকারের দেওয়া ঋণ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। কুমোরদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০২১
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।