ঢাকা: দরজায় কাড়া নাড়ছে রমজান। অন্যদিকে চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।
এতে বলা হয়, আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে বুধবার (২ মার্চ) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সভায় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পণ্যের মজুদ, সরবরাহ ও দাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাস এলেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এদেশের বেশ পুরোনো বিষয়। স্বাভাবিকভাবেই রমজানে কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় ভোজ্য তেল, ডাল, চিনি, ছোলা এবং মসলার চাহিদা বেশি থাকে। এই চাহিদাকে পুঁজি করে অসাধু চক্র নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত হয়ে যান। সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দেন পণ্যের দাম। যার প্রভাব নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের জন্য ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়ায়। খেটে খাওয়া, দিনমজুর ও যাদের দৈনিক বা মাসিক আয় নির্দিষ্ট, পণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে গেলে তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া রমজানে এসব মানুষের আয় বাড়ে না, বরং অনেকের কমে যায়।
বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে ব্যবসায়ীরা এখন আর রমজানে দাম তেমন বাড়াছেন না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রমজান আসার এক-দুই মাস আগে থেকেই পণ্যের দাম কয়েক দফা বাড়িয়ে দিচ্ছেন, যাতে কেউ বলতে না পারে রমজানের কারণে দাম বেড়েছে। এ কারণে এবার পেঁয়াজ, রসুনের দাম ঠিক থাকলেও ভোজ্য তেলসহ অন্য পণ্যের দাম এরই মধ্যে কয়েক দফা বেড়েছে।
সম্প্রতি ব্র্যাকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দেশের ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ কাজ হারিয়েছে ৬২ শতাংশ। পাশাপাশি পুরোপুরি কর্মহীন হয়েছেন ২৮ শতাংশ মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার প্রকোপ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় মানুষ আবারও আশার আলো দেখছেন। সবকিছু পেছনে ফেলে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। ঠিক এমন সময় পণ্যের বাড়তি দর ক্রেতাদের ভোগান্তিতে ফেলছে। আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়ায় তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে উচ্চবিত্তরা সমন্বয় করতে পারলেও মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষকে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
সম্প্রতি এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আসন্ন রমজানকে ঘিরে বাজারে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে কাজ চলছে। গতবারের চেয়ে এবার টিসিবির ট্রাক সেলে পণ্যের পরিমাণ ও স্থান বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিকই থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে গেলে সেটি বাংলাদেশও বেড়ে যায়। এবারের রমজানে যেন কোনো কিছুর দাম না বাড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করছি।
বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখার বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশের সব স্থানে বাজার মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। কেউ কোনো পণ্য মজুত করে দাম বাড়ালেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে রাজধানীর খুচরাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব ধরনের চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও সরু চালের দাম বেড়েই চলছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি মোটা চালের দাম আবারও ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সরুচাল ৬২ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা, ভোজ্যতেলের দামে গত দেড় বছর ধরে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। বর্তমানে পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৭৯৫ টাকা, প্রতি লিটার ১৭৮ টাকা, খোলা প্রতি কেজি ১৪৩ টাকা, খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, পেঁয়াজ ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ১ মার্চ, ২০২২
জিসিজি/এমএমজেড