ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সবুজ অর্থায়নে এগোতে চায় সোনালী ব্যাংক

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২২
সবুজ অর্থায়নে এগোতে চায় সোনালী ব্যাংক

ঢাকা: সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘গ্রিন ফিন্যান্স’ নামে প্রচলিত পরিবেশবান্ধব ব্যবসায় উদ্যোগে পর্যাপ্ত তহবিল থাকলেও যোগ্য উদ্যোক্তা পাচ্ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক।

সবুজ অর্থায়ন বলে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ব্যবসায়িক অবকাঠামোর জন্য ঋণকে বোঝানো হয়।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে শুরু করে সূর্যের আলোর ব্যবহার বাড়ানো, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা এবং কাগজের তুলনামূলক কম ব্যবহারসহ বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তিতে স্থাপিত অবকাঠামোকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে ধরা হয়।

বিশ্বায়নের যুগে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির ধারণা থেকে ২০১১ সালে গ্রিন বা সবুজ ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সবুজ অর্থায়নের গুরুত্ব অপরিসীম উল্লেখ করে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশ খারাপের দিকে যাচ্ছে, ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্জ্য ফেলার মাধ্যমে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে। এ জন্য সবুজ অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত আইলা কিংবা ঘূর্ণিঝড় হিসেবে প্রতিবছরই আমাদের কাছে আসছে। আমরা অনেক খরচ করি। খরচটা পরিবেশবান্ধব হওয়া আবশ্যক।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গোষ্ঠীভিত্তিক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ দেন পল্লী কর্মসংস্থান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।

পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ, কারখানার শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা, জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলার জন্যই এ ধরনের কারখানা স্থাপনকে বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। গ্রিন ফ্যাক্টরি হলে একদিকে যেমন পরিচালন ব্যয় কমে যায়, তেমনি বিদেশি ক্রেতারা আকৃষ্ট হয় বেশি। ফলে রপ্তানির পরিমাণ বেড়ে যায়।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিকে ঋণঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন ঋণমঞ্জুরি ও নবায়নের সময় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রকল্পের ঋণঝুঁকি নিরূপণের পাশাপাশি পরিবেশগত ঝুঁকি নিরূপণ করা হচ্ছে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান মনে করেন, দেশে গ্রিন ফিন্যান্স এখন লিমিটেড স্কেলে আছে। কারণ এখানে মুনাফা কম, তাই উদ্যোক্তারাও আসছেন না।

তিনি বলেন, ফান্ড নিয়ে বসে আছি। উদ্যোক্তা আসছে না। যদি উদ্যোক্তা আসে, কনসেপ্টটা যেহেতু কাজ করছে, এটার পরিধি বাড়বে।

আতাউর রহমান বলেন, সরকারের তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু ইনসেনটিভও আছে। তারপরও গ্রিন ফিন্যান্স করতে ফান্ড আছে। আসতে হবে উদ্যোক্তাদের।

সোনালী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, গ্রিন ব্যাংকিংয়ে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা আছে। আপনি ওভারনাইট কাউকে গ্রিন করতে পারবেন না। ধরুন আপনি একটি টেক্সটাইলে ইনভেস্ট করেছেন। এখানে ইএফটি, পরিবেশবান্ধব বিষয়গুলো মানা হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে হবে।

জানা গেছে, পরিবেশবান্ধব পণ্য ও সেবা উদ্ভাবন, উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে সোনালী ব্যাংক। ব্যাংক কর্তৃক অর্থায়নকৃত ও অর্থায়নযোগ্য প্রকল্পে পরিবেশগত দিক থেকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত পণ্য উৎপাদন, বিপণন, বাজারজাতকরণ সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।

বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক পেপারলেস ব্যাংকিং নিয়ে কাজ করছে বলে জানান এটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি বলেন, যদি পেপার না থাকে, তবে আলটিমেটলি বাঁশ লাগবে না, কাঠ লাগবে না। সেভ হবে। দিস ইজ অলসো এ গ্রিন ফিন্যান্স। আমরা আলো সেভ করে যাতে কাজ করতে পারি, সোলারে কাজ করতে পারি। সে জন্য আমরা সোলারে ইনভেস্ট করছি।

সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তঃকার্যালয় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশনা সংবলিত ইশতেহার জারি করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এই ব্যাংকের সব অফিস ও শাখা পর্যায়ে কাগজের ব্যবহার কমানো, পানির ব্যবহার পরিমিতকরণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মিতব্যয়িতার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে রিডিউস, রিফিউজ এবং রিসাইকল চর্চার মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বা সাশ্রয়ী ব্যাংকিং নিশ্চিতকরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গ্রিন স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং প্রণয়ন করে ব্যাংকের সর্বস্তরে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ই-মেইলের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে।

পরিবেশ আইনের সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাংকার, গ্রাহক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার এবং পরিবেশ রক্ষার কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করার জন্য প্রেষণা সৃষ্টির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। গ্রিন ব্যাংকিং বিষয়ে ব্যাংকের স্টাফ কলেজ ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোতে প্রশিক্ষণ/কর্মশালা চলমান রয়েছে।

সময় ও অর্থের সাশ্রয় এবং কাগজবিহীন ব্যাংকিং চালুকরণের নিমিত্ত সার্কুলার ইস্যুকরণসহ যাবতীয় পত্রযোগাযোগ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও ই-মেইলের মাধ্যমে সম্পাদনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।