মানিকগঞ্জ: পেঁয়াজের রাজ্য হিসেবে খ্যাত মানিকগঞ্জের বরঙ্গইলে চলতি মৌসুমে আশানুরূপ ফলন হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের দর পতনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।
প্রতি মণ পেঁয়াজ ৭-৮ শতাধিক টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে অথচ বপন থেকে তোলা পযর্ন্ত যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তা তুলতে পারছেন না চাষিরা। একে তো সিন্ডিকেট আর অন্যদিকে স্থানীভাবে নেতারা গাড়ি প্রতি ৩৪০ টাকা চাঁদা আদায়ের কারণে মূলত পাইকারি বাজারে ব্যাপারী আসছেন না— এমন অভিযোগ করছেন স্থানীয় আড়তদাররা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় চাষিরা বস্তা ভর্তি করে পেঁয়াজ নিয়ে আড়তে আসছেন এবং সারি বন্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে বস্তার মুখ খোলা রেখে দর দামে ব্যস্ত সময় পার করছেন দু’পক্ষ। তবে পেঁয়াজের আমদানি বেশি হওয়ায় কম দামে ফইরারা (পাইকারের দালাল) ক্রয় করছেন পেঁয়াজ।
বরঙ্গাইল হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষক মো. আবুল বাংলানিউজকে বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি, ফলনও গত বছরের চেয়ে ভালো হয়েছে। তবে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় উৎপাদন খরচও তোলা কষ্ট হয়ে যাবে। যেহেতু আমি ১০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছি, সেজন্য গড়ে হয়তো কিছু টাকা লাভ থাকবে। কিন্তু যারা ১-২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছেন, তারা সম্ভবত উৎপাদন খরচ তুলতে পারবেন না শতভাগ।
নজু মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, ফলন ভালো হওয়ায় পেঁয়াজ নিয়ে এখন বড় ধরনের একটি বিপদে আছি। না রাখতে পারছি জমিতে, না পারছি বাড়িতে। এদিকে পেঁয়াজ বাজারের অবস্থা ভালো নয়, দর ভালো না। সব কিছু মিলিয়ে বাধ্য হয়ে হাটে পেঁয়াজ নিয়ে আসেছি। কিন্তু, যে দাম বলছে ফইরার, সে দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে উৎপাদন ব্যয়ও উঠবে না। তারপরও বাধ্য হয়ে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। পেঁয়াজের দর পতনের জন্য বড় ধরনের সিন্ডিকেট কাজ করছে তা না হলে এ রকম দর পতন হওয়ার কথাই না।
তবে একাধিক আড়ৎদাররা বলছেন, চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের আমদানি বেশি হওয়াতে দর পতন হয়েছে। আবার অনেকেই বলছেন, বাইরের পাইকাররা আসতে চান না ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের চাঁদা দাবির জন্য আর এ কারণে চাষিরা পেঁয়াজের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না বলেও মন্তব্য তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আড়ৎদার বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর আমাদের এই অঞ্চলে পেঁয়াজের উৎপাদন অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেকাংশে ভালো হয়েছে। যে কারণে সরবরাহের চাহিদার চেয়ে উৎপাদিত পেঁয়াজ বেশি হওয়ায় কিছুটা দর পতন হয়েছে। এছাড়া পাইকারেরও একটি সংকট রয়েছে এ আড়তে। কারণ হলো স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে প্রতি ট্রাক থেকে ৩৪০ টাকা করে চাঁদা নেওয়ায় অনেক পাইকার এ আড়তে আসছেন না।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে ট্রাক প্রতি টাকা আদায় কারা করছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে এই আড়তদার বলেন, আমরা ব্যবসা বাণিজ্য করে খাই, কারও নাম-পরিচয় দিলে আমাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বরঙ্গাইল আড়ৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিক মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, এ আড়তে সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার এ দু’দিনে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানি হয় এবং দিন শেষে ৫০-৬০ গাড়ি পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এছাড়া সপ্তাহে অন্যান্য দিন ১০-১৫ ট্রাক পেঁয়াজ এখান থেকে যায়।
অন্য বছরের চেয়ে এবার পেঁয়াজের দর কিছুটা কম, যে কারণে পেঁয়াজ চাষে চাষিরা আগ্রহ হারাতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সিদ্দিক মোল্লা।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন বাংলানিউজকে বলেন, পেঁয়াজের আড়ৎ থেকে অবৈধভাবে গাড়ি প্রতি টাকা আদায় করা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত কাজ। অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। যদি কেউ এ ধরনের কাজ করে থাকেন, তিনি যেই হোক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০২২
এসআরএস