ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘প্রথাগত বাজেট প্রক্রিয়ায় ব্যত্যয় ঘটানো প্রয়োজন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
‘প্রথাগত বাজেট প্রক্রিয়ায় ব্যত্যয় ঘটানো প্রয়োজন’ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

ঢাকা: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মূল্যস্ফীতি নিরসনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য প্রথাগত বাজেট তৈরি করার যে প্রক্রিয়া, সেটা থেকে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটানো প্রয়োজন বলে মনে করেন এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

রোববার (১৭ এপ্রিল) সকালে ‘আসন্ন বাজেট নিয়ে জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে এ কথা বলেন তিনি। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ এ সংলাপের আয়োজন করে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী বাজেটে জনমানুষের প্রত্যাশাটা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমরা কোভিড উত্তর যে পুনরুজ্জীবনটা ২০২১ সালের শেষের দিকে দেখেছিলাম, ২০২২ সালের শুরু থেকে এটা ধাক্কা খেয়েছে। এটার সাথে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, সার ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য এবং ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে পৃথিবীর সার্বিক অস্থিরতা ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং এর সাথে পণ্য পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা ভীষণভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। সুতরাং আমরা বলছি ২০২২-২৩ অর্থবছরের শুরুটা যেমন ছিল, ঠিক শেষটা একই রকম উৎসাহব্যঞ্জক যে হবে সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছর একটি নাজুক অর্থবছর হবে। এটা বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে, আঞ্চলিক পরিস্থিতির কারণে এবং প্রত্যেক দেশের নিজ নিজ পরিস্থিতির কারণে হতে পারে। তাই ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যে নতুন চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলোকে মাথায় রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। প্রথাগত বাজেট তৈরি করার যে প্রক্রিয়া, সেটা থেকে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটানো প্রয়োজন। এটার জন্য যেটা প্রস্তাব করছি সেটা হলো, বাজেট দেওয়ার আগে বাজেটের একটি নীতি কাঠামো যদি প্রকাশ করা হয়, তাহলে ওই নীতি কাঠামো পড়ে জনমানুষের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সরকারকে জানানোর সুযোগ হয় এবং সেটা তারা মূল বাজেটের ওপরে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। সুতরাং বাজেট যদি একবার প্রস্তাবিত হয়ে যায়, তখন কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন বা সামান্য আর্থিক পরিবর্তন করাটাও সামান্য ব্যাপার না। সেজন্য আমরা যেটা বলতে চাচ্ছি, অসাধারণ সময়ে সাধারণ বাজেট যেন না আসে। আমরা অসাধারণ সময়ে ব্যতিক্রমধর্মী বাজেট চাচ্ছি। যে বাজেটের একটি নীতি কাঠামো আগে প্রকাশ করা প্রয়োজন।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, বাজেট যদি জুন মাসে করেন তাহলে আগামী মাসের যে কোনো একটা সময়ে এ নীতি কাঠামো প্রকাশ করা যেতে পারে। তাহলে সর্বস্তরের জনগণ এটার ওপরে মতামত দিতে পারে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যে সমস্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, সেটার একটি তথ্য-উপাত্ত নীতি কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। এটা থাকলে বাজেটের আলোচনা অনেকটাই যুক্তিযুক্ত ও তথ্যনির্ভর হবে বলে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, সরকার থেকে একাধিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে কোভিডের সময়কালে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গরিব ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে খাদ্যপণ্য দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৫০ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেবে। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে সাহায্য অব্যাহত আছে, এটা সমন্বয় করে একটি অভিন্ন তথ্যভাণ্ডারে মাধ্যমে তালিকা প্রকাশ করা হলে সরকার থেকে যে প্রণোদনা বরাদ্দ করেছে, কোন এলাকায় কোন জনপ্রতিনিধি কী পেয়েছেন, সেটার একটি তথ্য পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। প্রণোদনা কী দেওয়া হলো আর কী পেল সেটার মধ্যে যদি কোনো পার্থক্য থাকে তাহলে সরকারের যে নীতি, যে আকাঙ্ক্ষা, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়ে যায়। যে যে এলাকায় জনপ্রতিনিধি আছেন, তারা কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছিলেন এবং কত টাকা খরচ করেছেন, সেগুলো জানারার অধিকার রয়েছে। আমরা জানতে চাই, আসলেই পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ তার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দিচ্ছে কিনা, এটা বাজেট আসার আগে পরিষ্কার করা দরকার।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আগামী বাজেটে দুটি বিষয় লক্ষ্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড পরিস্থিতিতে সকলের কর্মহীনতা বেড়েছে, এর সাথে সাথে আয় কমেছে, মানুষ সঞ্চয় ভেঙেছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এটা মুখের কথা নীতি হিসেবে বললে হবে না, এটার জন্য লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে হবে কত লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। এটা শুধু সরকার দেবে, এটা কেউ বলছে না; এটা ব্যক্তি খাতে, সরকারি খাতে কত হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। আগামী দিনে বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি। আগামী বাজেটের আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিরসন করা। সাধারণ মানুষের জীবন এখন বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে, যে হারে ব্যয় বেড়েছে সেভাবে তাদের আয় বাড়েনি। আয় কমেছে খরচ বেড়েছে সুতরাং সরকারের প্রত্যক্ষ সহায়তার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তায়, খাদ্য সহায়তা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে কীভাবে এই মানুষগুলোর জীবনকে আরেকটু স্বাচ্ছন্দ্য করা যায় আগামী বাজেটে এটুকু পরিষ্কার ঘোষণা আসতে হবে। সবকিছুই প্রাক-বাজেট নীতি কাঠামোয় যদি আসে তাহলে মানুষ এতে তাদের মতামত দিয়ে সরকারকে আরও কার্যকরী বাজেট দেওয়ার জন্য সহায়তা করতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
এসএমএকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।