লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে কোরবানির গরুর চামড়া বেচা-বিক্রি হলেও বিক্রি হচ্ছে না ছাগলের চামড়া। তাই বিনামূল্যে চামড়া ব্যবসায়ীদের ছাগলের চামড়া দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ব্যাপারীদের দাবি- ছাগলের চামড়া কিনে প্রসেসিং করে বিক্রি করা পর্যন্ত যে খরচ হবে, সে টাকায় বিক্রিও করতে পারবে তারা।
এদিকে ব্যবসায়ীরা সর্বনিম্ন দামে গরুর ছামড়া ক্রয় করছেন। প্রতিটি গরুর ছামড়া আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। যদিও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বেধে দেওয়া দামে চামড়া কিনছেন না ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (১১ জুলাই) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যাপারী এবং চামড়া বিক্রিতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
দুপুরে লক্ষ্মীপুর উত্তর স্টেশন সংলগ্ন চামড়ার আড়তে একটি ছাগলের চামড়া নিয়ে আসন মফিজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। আড়তদার তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন- মাগনা (বিনামূল্যে) দিলেও তিনি ছাগলের চামড়া রাখবেন না। তাই মফিজুল ইসলাম চামড়াটি নিয়ে বিপাকে পড়েন।
জানতে ছাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আজ (সোমবার) সকালে তিনি ছাগলটি কোরবানি দিয়েছেন। চামড়াটি তিনি ব্যাগে ভরে বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সাইকেল চালিয়ে আড়তে নিয়ে আসেন। কিন্তু কোথাও তিনি সেটি বিক্রি করতে পারেননি। কেউ বিনামূল্যেও নিচ্ছে না।
বলেন, এ চামড়া দিয়ে এখন কি করবো। মাটিতে পুঁতে ফেলতে হলেও সেটি আবার বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে। কোথাও ফেলে দিলে পরিবেশ নষ্ট হবে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের ক্বারী ওছিমুদ্দিন ইবতেদায়ী মাদরাসার পরিচালক মাওলানা নজির আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, মাদরাসার আশপাশে যারা পশু কোরবানি দেয়, তারা চামড়াগুলো মাদরাসায় দান করে। এ ঈদে ৫৪টি গরু এবং ৫টি ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেছি। সোমবার সকালে জকসিন হাটে চামড়াগুলো বিক্রি করে দেই। গরুর প্রতিটি চামড়ার দাম পেয়েছি ৩৮০ টাকা। কিন্তু ব্যাপারীরা ছাগলের চামড়া ক্রয় করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। তাই বিনামূল্যে ছাগলের চামড়াগুলো ব্যাপারীকে দিয়ে এসেছি। তারা বিনামূল্যেও নিতে চায় না।
পৌর এলাকার আটিয়াতলী গ্রামে কসাই আবদুল খালেক বলেন, আজ সোমবার সকালে আমি দুটি ছাগল কোরবানি করেছি। ছাগলের চামড়া বাজারে বিক্রি হয় না। তাই ছাগলের উচ্ছিষ্ট আবর্জনার সঙ্গে চামড়া দুটি মাটিতে পুঁতে ফেলেছি। ঈদের দিনেও ছাগলের তিনটি চামড়া মাটিতে পুঁতে দিয়েছি।
কমলনগর উপজেলার উত্তর চর লরেন্স মদিনাতুল উলুম কাওমী মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিন বলেন, আমরা গরুর চামড়ার পাশাপাশি ৫০টি ছাগল ও ভেড়ার চামড়া পেয়েছি। কিন্তু ব্যাপারীরা ছামড়াগুলো কিনতে রাজি হয়নি। তাই সেগুলো নিয়ে বিপাকে পড়ি। জোর করে গরুর চামড়ার সঙ্গে ওই চামড়াগুলো বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছি।
ছাগলের চামড়া কেন কিনছে না ব্যবসায়ীরা এমন তথ্য জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর উত্তর স্টেশনের চামড়া ব্যবসায়ী মনির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, সরকার ছাগলের চামড়ার ফুট নির্ধারণ করেছে ১৮ টাকা করে। বড় আকারের একটি চামড়া হবে গড়ে ৫ ফুট। সে হিসেবে দাম আসে ৯০ টাকা। ছোট আকারের চামড়ার দাম আরও কম হবে। একটি চামড়া ২০ টাকা দিয়ে কিনে সঙ্গে আরও ২০ টাকার লবণ এবং প্রসেসিং, ভাড়া ও আনুষাঙ্গিক খরচ পড়বে ২০ টাকা। সব মিলিয়ে ৬০ টাকা খরচ। বড় চামড়া ৯০ টাকা দাম নির্ধারণ করা হলে আমরা ওই টাকায় বিক্রি করতে পারবো না। আবার ছোট চামড়ার দাম আরও কম। সব মিলিয়ে ছাগলের চামড়াতে আমাদের লস্ হবে। তাই আমরা ছাগলের চামড়া ক্রয় করি না, কেউ বিনামূল্যে দিলেও নেই না- যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২২
আরএ