ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

চামড়ার দাম কম, আয় কমেছে মাদরাসা ও ব্যবসায়ীদের

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২২
চামড়ার দাম কম, আয় কমেছে মাদরাসা ও ব্যবসায়ীদের

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর জেলায় কোরবানির গরুর চামড়া বেশি সংগ্রহ করে মাদরাসা ও এতিমখানাগুলো। ধর্মীয় এ প্রতিষ্ঠানগুলো চামড়া বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানের কয়েক মাসের খরচ চালাতো।

কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানগুলো চামড়া বিক্রি করে তেমন লাভবান হতে পারছে না। লক্ষ্মীপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রতিটি চামড়া ১০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় পর্যন্ত দাম দিয়ে কিনছেন।  

এদিকে ঈদের দিন থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কোরবানি দাতা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে চামড়া কিনে আড়ত বা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতো। পাড়ায় পাড়ায় চামড়া কেনার জন্য গত কয়েক বছর থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পদচারণা থাকতো। কিন্তু লোকসানে পড়ে এসব ব্যবসায়ীরা এখন চামড়া কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন।  

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের আটিয়াতলী গ্রামের আবদুল খালেক একজন পেশাদার কসাই। ছোটবেলা থেকে গরু এবং গরুর চামড়া বেচা-কেনার সঙ্গে জড়িত তিনি। কিন্তু এ কয়েক বছরে চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় তিনি এ ব্যবসা থেকে সরে এসেছেন।  
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ১০ বছর আগে যে চামড়াটি তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেছি- এখন ওই চামড়ার দাম তিনশ টাকাও নেই। তাই কয়েক বছর থেকে চামড়া বেচা-বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। আমার মতো বহু মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী এ ব্যবসা থেকে সরে গেছেন।  

কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির ঈদের চামড়া মাদরাসার আয়ের একটি প্রধান উৎস ছিল। যুগ যুগ ধরে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান চামড়া বিক্রির টাকা দিয়ে কয়েক মাসের মাদরাসার খরচ চালাতো। এছাড়া মাদরাসার উন্নয়নমূলক কাজে এ টাকা ব্যয় হতো। গত ১০ বছর আগেও চামড়া বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা পেত। কিন্তু এখন যে টাকা পাচ্ছে- তা দিয়ে মাদরাসার উন্নয়ন কাজ তো দূরের কথা- স্বাভাবিক খরচও চলে না।  

স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, চামড়া হলো গরিবের হক। কিন্তু চামড়ার দামে ধস নামায় গরিবের হক নষ্ট হয়ে গেছে। চামড়ার টাকা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করার পাশাপাশি স্থানীয় গরির দুঃখীদের মাঝেও বন্টন করা হতো।  

লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের ক্বারী ওছিমুদ্দিন ইবতেদায়ী মাদরাসার পরিচালক মাওলানা নজির আহম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, মাদরাসার আশপাশে যারা পশু কোরবানি দেয়, তারা চামড়াগুলো মাদরাসায় দান করে। এ ঈদে ৫৪টি গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছি। গড়ে প্রতিটি চামড়া ৩৮০ টাকায় বিক্রি করেছি।  

তিনি বলেন, এ ঈদে যে চামড়া পেয়েছি, সেগুলো ১০ বছর আগে বিক্রি করলে লাখ টাকার উপরে পেতাম। কিন্তু এখন পেয়েছি ২০ হাজার টাকার মতো। এর মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করা থেকে বাজারে বিক্রি করা পর্যন্ত একটা খরচ চলে গেছে।  

একই কথা জানালেন চর লরেন্স মদিনাতুল কাওমি মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা রুহুল আমিন। বলেন, চামড়া বিক্রির টাকা দিয়ে মাদরাসার উন্নয়নমূলক কাজ করা হতো। এখন যে টাকা পাই, তা দিয়ে কয়েক দিনের খরচ চালানো যায়। এ ঈদে আশপাশের এলাকা থেকে ২৩৮টি কোরবানির গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছি। প্রতিটি চামড়া গড়ে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করতে পেরেছি।  

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বটতলীর জামিয়া ইসলামিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, আমরা ৪৫০টি গরুর চামড়া ৬৭০ টাকা করে বিক্রি করেছি।

জেলার রামগতির উপজেলার জামিয়া ইসলামিয়া কলাকোপা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মোহাম্মদ আলী বলেন, ৩৭৯টি চামড়া ৪০০ টাকা করে দাম পেয়েছি। তবে চামড়ার দাম আগের মতো থাকলে চামড়া বিক্রির টাকা দিয়ে মাদরাসা কার্যক্রম কয়েক মাস ভালোভাবে চালানো যেত।  

চামড়ার দাম নিয়ে কথা হয় লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের মনির হোসেন, বাবুল, মান্নান, রুহুল আমিনসহ কয়েকজন আড়তদারের সঙ্গে। চামড়ার দাম পড়ে যাবার পেছনে তারা ট্যানারি মালিকদের দায়ী করেছেন।  

বাংলানিউজকে তারা জানিয়েছেন, সরকারের বেধে দেওয়া দামে তারা চামড়া ক্রয় করতে পারছেন না। ৪৪ টাকা বর্গ ফুট হিসেবে বড় আকারের একটি চামড়ার দাম আসে ১৫০০ টাকা। কিন্তু সে চামড়া তারা কিনছেন সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা দিয়ে। কোনোটি আবার ৫০০ টাকা। ছোট আকারের চামড়া ১০০ থেকে ২০০ টাকা।  

তিনি বলেন, সরকারের নির্ধারিত দামে নয়, ট্যানারি মালিকদের নির্ধারিত দামে আমাদেরকে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। ট্যানারি মালিকরা যে দাম দেয়- সে হিসেবে প্রতি বর্গ ফুট চামড়ার দাম পড়ে ২৫-৩০ টাকা। তাই আমরা ট্যানারি মালিকদের দামের বিষয়টি মাথায় রেখে চামড়া ক্রয় করি। প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খরচ পড়ে। ট্যানারি মালিকেরা সিন্ডিকেট করে আমাদের কাছ থেকে কম দামে চামড়া কিনে নেয়।  

ক্ষুদ্র এসব ব্যবসায়ীরা বলেন, গত কয়েক বছর থেকে তারা চামড়া কিনে লোকসানের শঙ্কায় থাকেন। সরকারে নির্ধারিত দামে ট্যানারি মালিকরা তাদের কাছ থেকে চামড়া কিনলে তারা মাঠ পর্যায়ে দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারতেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।