হবিগঞ্জ: অব্যাহত খরা ও দিনে অন্তত ছয় ঘণ্টা বৈদ্যুতিক লোডশেডিংয়ের কারণে সংকটের মুখে পড়েছে চা উৎপাদন। এতে হবিগঞ্জের লস্করপুর ভ্যালির ২৪টি বাগানে ভরাও মৌসুমেও উৎপাদন কমে গিয়েছে কয়েকগুণ।
গেল বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে এ ২৪টি বাগান থেকে চা উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি সাড়ে ১৭ লাখ কেজি। এ পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় চলতি বছরও। কিন্তু খরার কারণে শুরুর দিকেই উৎপাদন কমে যাওয়ায় শঙ্কা দেখা দিয়েছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। কিন্তু গত ২ সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড খরার কারণে রেড স্পাইডার ও হেলোফিলিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে চা গাছ। যে বাগান থেকে দিনে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কেজি পাতা তোলা হয়, সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৮ থেকে ১০ কেজি।
ডানকান ব্রাদার্সের চান্দপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসময় তাদের বাগানে দিনে ৪০ হাজার কেজির বেশি পাতা উৎপাদন হওয়ার কথা, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি। একই অবস্থা ভ্যালির আমু, নালুয়া, লস্করপুর, চন্ডিচড়াসহ আরও কয়েকটি বাগানে।
ছোট বাগানগুলোতে উৎপাদনের অবস্থা আরও খারাপ। গত জুন পর্যন্ত প্রতিটি বাগানে উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে ১৫ থেকে ৪৫ শতাংশ।
এদিকে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দিনে ২ ঘণ্টা লোডশেডিং করার কথা থাকলেও লোডশেডিং হচ্ছে অন্তত ৬ ঘণ্টা। এর প্রভাব পড়েছে চা শিল্পেও। অধিকাংশ চা বাগানের ফ্যাক্টরি প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকছে। এছাড়া বার বার ফ্যাক্টরি বন্ধ হওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে চায়ের গুণগত মান। জেনারেটর ব্যবহার করলে এতে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়।
চান্দপুর চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক শামীমুল হুদা বলেন, চায়ের ভরা মৌসুমে আশানুরূপ পাতা পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি নেই, তাই রোগের আক্রমণও বাড়ছে। পাশাপাশি বিদ্যুতের সমস্যা নতুন করে সংকট তৈরি করেছে।
দেউন্দি চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চায়ের ভরা মওসুমে প্রচণ্ড খরায় সেচ দিতে হচ্ছে। নতুন করে সমস্যা সৃষ্টি করেছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এতে উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়েছে।
লস্করপুর ভ্যালির চেয়ারম্যান ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, পুরো ভ্যালিতেই এবার চায়ের উৎপাদনে বাধা দীর্ঘ মেয়াদি খরা, নানা রোগ। নতুন যোগ হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। সব মিলিয়ে চা শিল্প বড় সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
এসআই