ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

‘নতুন শিক্ষাক্রমে দেশীয় ভাবনার ছাপ নেই’

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৪
‘নতুন শিক্ষাক্রমে দেশীয় ভাবনার ছাপ নেই’

ঢাকা: নতুন শিক্ষাক্রমে দেশীয় ভাবনার ছাপ নেই মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেছেন, এটি একটি বিদেশি প্রকল্প। ফলে এর সমস্ত কাঠামো বিদেশায়িত।

এখানে পূর্ববঙ্গের দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানীদের ভাবনা যুক্ত করা হয়নি। যারা এর অংশীজন, শিক্ষাক্রম প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ডোনারদের চাহিদা পূরণ করতেই শিক্ষাক্রমে এসব যুক্ত করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ডাকসু ক্যাফিটেরিয়ায় আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক তানজীম।

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের তৃতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক এ সেমিনার আয়োজন করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, শিক্ষা ও শিশুরক্ষা আন্দোলন আহ্বায়ক রাখাল রাহা, স্বপ্ননগর বিদ্যা নিকেতনের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ধ্রুব জ্যোতি।

অনুষ্ঠানে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২১’ শীর্ষক লিখিত সেমিনার রিপোর্ট পাঠ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক ফারিহা তাবাসসুম প্রজ্ঞা।

অধ্যাপক তানজীম বলেন, শিক্ষাক্রমে গণতন্ত্র, সহিষ্ণুতা, সহনশীলতার কথা বলা হয়েছে। দেশীয় বাস্তবতার সাথে এটি কতটুকু প্রাসঙ্গিক? যেখানে নিবর্তনমূলক আইন করে ভিন্নমতকে দমন করা হয়, যে রাষ্ট্রব্যবস্থা অন্যের চিন্তাকে বরদাস্ত করে না। ইউনিসেফ শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্তি চেয়েছে, তাই এগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জ্ঞানের ক্ষেত্রে স্থান, কাল, পাত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ। জীবন যাপন ও জীবনের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ডর একজন শিক্ষার্থী আর বাংলাদেশের একজন শিক্ষার্থীর অবস্থা কি এক? এখানে এসাইনমেন্ট শব্দটাকেই তো শিক্ষার্থীরা ভয় পায়। আমাদের যত ধারার শিক্ষা আছে, বাইরে তা নেই। শিক্ষকদের প্রস্তুত করার জন্য যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল, তা দেওয়া হয়নি। বরং বারবার বই পরিবর্তন করে স্বার্থান্বেষী একটি মহল নিজেদের পকেট ভারী করছে। এটা বাস্তবায়নযোগ্য কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম গ্রহণের জন্য অভিভাবকরা প্রস্তুত কি না, তা বিবেচনা করা হয়নি; তা নিয়ে আলোচনাও হয় না। শিল্প-সংস্কৃতি এসব বিষয়কে যে অভিভাবক ভালো চোখে দেখেন না, তার বাচ্চা তো এসব চর্চা করতে পারবে না। ফলে স্কুলের বইতে যতই এসব রাখা হোক, বাচ্চা এসব অনুশীলনই করতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমরা শিক্ষাক্রম নিয়ে কথা বলছি, অথচ আমাদের একটি শিক্ষানীতিই নেই। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার যে উপকরণের ব্যয়ভার, তা গরিব মানুষের বহনের ক্ষমতা নেই। ফলে সে তার বাচ্চাকে স্কুলে দিতে পারবে না।

রাখাল রাহা বলেন, এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের কাজ করার কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু যে শিক্ষার্থী ভাবতে চায়, চিন্তা উৎপাদন করতে চায়, তাদের পরিসর এই শিক্ষাক্রমে নেই। এই কারিকুলাম বাস্তবায়নযোগ্য না; যদি বাস্তবায়ন হয়ও, এটি সাধারণ নিয়ম ভঙ্গ করেছে। তাহলে কি আমরা আগের কারিকুলাম চাচ্ছি? না। বরং আগের কারিকুলামের নানা সমস্যা নিয়ে আমরাই বারবার সমালোচনা করেছি। সমাজ, রাষ্ট্র বিবেচনায় ধাপে ধাপে একটি কারিকুলামে পরিবর্তন আনতে হবে, একবারে না।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৪
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।