গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী): রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগ শিক্ষকই ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
এ কারণে কোনো স্কুলেই নিয়মিতভাবে সব বিষয়ের ক্লাস হয় না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালন্দে ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি দাখিল মাদ্রাসা ও ২টি কলেজে প্রায় ১০ হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের ২/১টি ছাড়া বেশিরভাগ স্কুলেই নিয়মিতভাবে সব বিষয়ের ক্লাস নেন না শিক্ষকরা।
দুই থেকে ৩টি বিষয়ে পড়ানোর পর বিরতির আগেই ছুটি দিয়ে শিক্ষকরা ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। আবার বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়লে ক্লাসে শিক্ষকরা নানা ধরনের সমস্যাও সৃষ্টি করেন।
এতে বাধ্য হয়ে ছাত্রছাত্রীরা স্কুলের শিক্ষকের কাছেই প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হচ্ছে।
ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, তাদের নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে না পড়লে পরীক্ষায় নম্বর কম দেওয়া হয়। এতে করে চাইলেও ভালো শিক্ষকের কাছে তারা প্রাইভেট পড়তে পারেনা।
শিক্ষকদের সন্তুষ্ট রাখতে অভিভাবকরাও একই স্কুলের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে কোটিং সেন্টার খুলে ছাত্রছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াচ্ছেন।
অধিকাংশ স্কুলের ইংরেজি, অংক, জীববিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক এ প্রাইভেট বা কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
কোনো শিক্ষার্থী বাইরের শিক্ষকদের কাছে পড়লে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের তাদের কাছে প্রাইভেট অথবা তাদের কোচিং সেন্টারে ফেরত নিয়ে আসেন।
এ ছাড়া শিক্ষকদের হাতে সংরক্ষিত ৩০ নম্বর থাকায় তারা সে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বাংলানিউকে জানান, তার মেয়ে গোয়ালন্দ প্রপার হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের শিক্ষকদের কাছে তাকে প্রাইভেট পড়াতে হচ্ছে। বেতন দেওয়া হচ্ছে, মোটা অংকের।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের কোচিং বন্ধের সিদ্ধান্তে তার সন্তান লেখাপড়ায় পিছিয়ে থাকায় বিনাপয়সায় পড়াতে দিয়েছেন মর্মে শিক্ষক একটি লিখিত আবেদন দিতে বলেছেন।
এদিকে, কোচিং বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্ত করতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরাই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন বলে অভিভাবকরা বাংলানিউজকে অভিযোগ করেছেন।
তবে এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা হলে তারা কোচিং বা ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রছাত্রী পড়ানো বন্ধ করতে বতর্মান বেতনের সঙ্গে আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানান।
তাদের দাবি, সরকারের দেওয়া বেতনে তাদের সংসার চলে না। তাই, বাধ্য হয়েই এ কাজ করছেন।
গোয়ালন্দ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আইডিয়াল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ফকির আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, কোচিং বন্ধে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা মেনে চলা উচিত।
তিনি বলেন, আমার জানা মতে, আমার স্কুলের কোনো শিক্ষক বর্তমানে প্রাইভেট পড়ান না।
এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবা আক্তার বলেন, নিয়মিত কাস না হওয়া বিদ্যালয়গুলোর তালিকা তৈরি করেছি। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শেষ হলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কোচিং বন্ধের মনিটরিং কমিটির আহ্বায়খ চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমিন বলেন, কোচিং বা প্রাইভেট টিউশন বন্ধের ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো অভিযান শুরু করিনি। তবে, নীতিমালা অনুযায়ী, খুব দ্রুতই কমিটি কাজ শুরু করবে। তাছাড়া পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষকরা বাসায় পড়াতে পারবেন না। প্রধান শিক্ষকের অনুমতিক্রমে স্কুলেই তাদের অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১২
সম্পাদনা: আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর