ঢাকা: নিয়ম-নীতি না মানায় নটরডেম কলেজের ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে সঙ্কটে পড়েছে সরকার। সরকারের ঘোষিত ভর্তি নীতিমালা অনুসারে অনলাইনে ভর্তির সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নতুন শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
নটরেডেম কলেজের ভর্তি কার্যক্রমের জটিলতা নিয়ে সোমবার শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষা অধিদফতরের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
জানা গেছে, দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি কলেজ এবার অনলাইনে ভর্তি করলেও নিজেদের ইচ্ছেমতো ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে নটরডেম কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন আদালত ভর্তি স্থগিত করায় তৈরি হয়েছে সংকট।
বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, নটরডেমের এ ঘটনায় দেশের অনেক কলেজ শিক্ষাবোর্ডকে হুমকি দিচ্ছে। কলেজগুলো বলছে, নীতিমালা লঙ্ঘনের জন্য নটরডেম কলেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে তারাও নীতিমালা মানবে না।
সোমবারের বৈঠকে শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমান উর রশীদ, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত
ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানান, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘‘নটরডেম কলেজের পুরো বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এই কলেজটি খ্রিস্টান
সম্প্রদায়ের একটি বিশেষ পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তারাই শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেন। তারা শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলিও করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে তাদের পুরো স্বাধীনতা আছে। ’’
‘‘কিন্তু এ স্বাধীনতারও একটা মাত্রা থাকা দরকার। দেশের সব ধরনের কলেজেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় সরকারের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী। অপেক্ষাকৃত ভালো কলেজে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুবিধার্থে আমরা এসএমএস’র মাধ্যমে ভর্তির প্রক্রিয়া চালু করেছি’’ বলে জানান মন্ত্রী।
কিন্তু নটরডেম কলেজ কর্তৃপক্ষ না মেনে নিজেদের মতো করে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। যাই হোক না কেন, শিক্ষার্থীদের বিপদে ফেলা যাবে না বলে উল্লেখ করেন
নাহিদ।
জানা গেছে, নটরডেম কলেজের এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। আদালতের নির্দেশনা ছাড়া নটরডেম কলেজে এবার ভর্তি
হওয়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে অনীহা প্রকাশ করছে বোর্ড। এতে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন কলেজটিতে এবার ভর্তি হওয়া ছাত্র ও তাদের অভিভাবকরা।
এ পরিস্থিতিতে নটরডেম কলেজের জটিলতা সর্ম্পকে করণীয় নির্ধারণে সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক জরুরি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ছাত্রদের ক্ষতি হয় এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে না। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষকে একেবারেই ছেড়ে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, সরকারের ভর্তি নীতিমালা-২০১২ এর বিরুদ্ধে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে নটরডেম কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে করে রাজধানীর বেসরকারি কলেজগুলোর কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, তারাও আগামীতে নিজস্ব পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। এ অবস্থায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ভর্তি বাণিজ্য বা অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তি করতেই নটরডেম কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি নীতিমালার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাছাড়া ভর্তি পরীক্ষার আড়ালে মেধাবী
শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ইচ্ছেমতো ছাত্র ভর্তি করারও অভিযোগ উঠেছে এ কলেজটির বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ফাহিমা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, ‘‘ভর্তি নীতিমালার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে স্টে-অর্ডার (স্থগিতাদেশ) নিয়ে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে নটরডেম কলেজ। আদালতে এর পরবর্তী শুনানি বা নিস্পত্তির আগ পর্যন্ত আমরা নতুন শিক্ষার্থীদের টাকা (নিবন্ধন ফি) গ্রহণ করতে পারি না। তবে ছাত্রদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে সর্বাত্তক প্রচেষ্টা থাকবে। ’’
নটরডেম কলেজের ভর্তি কার্যক্রম সর্ম্পকে জানতে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ফাদার বেঞ্জামিন কস্তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি।
চলতি শিক্ষাবর্ষের ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, একাদশ শ্রেণীতে ৬০০ এর বেশি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানোর অনুমতি আছে এমন কলেজসমূহে অনলাইনে ভর্তি
করা হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান এই নিয়মের বাইরে বা ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারবে না। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার মেধার ভিত্তিতে ভর্তির তালিকা প্রকাশ করবে শিক্ষাবোর্ড। কলেজ কর্তৃপক্ষকে তাদের ভর্তির সকল তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। ইতিমধ্যেই দেশের সব কলেজে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
কিন্তু নটরডেম কলেজ উল্টোপথে চলায় সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১২
এমএন/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর