জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম হোসেনের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবন সংলগ্ন মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও রাজনীতিবিদরা এ জানাজায় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম হোসেনের মৃত্যুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীর ভাবে শোকাভিভূত। ‘
তিনি বলেন, ‘গোলাম হোসেন খুবই অসময়ে চলে গেলেন। তার সম্পর্কে আমি ইতোমধ্যে জেনেছি। তিনি তার গ্রামের বাড়ি কাপাশিয়ায় যেতেন এবং সেখানে গাছ লাগাতে ভালোবাসতেন। সেখানকার মানুষের সঙ্গেও তার ভালো সখ্যতা ছিল বলে জেনেছি। ‘
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, তার পরিবার আমাদের পরিবার। তার সন্তান আমাদেরও সন্তান। আমরা তাকে মনে রাখবো। ‘
অধ্যাপক গোলাম হোসেনের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিন, বিভিন্ন অনুষদের ড়িন, রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক, শত শত শিক্ষার্থী, সহকর্মী, শুভাকাঙ্খীরা।
এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগাঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান অভি, সহদপ্তর সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি জাকিরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ ভূঁইয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সস্পাদক ও সাবেক এমপি খায়রুল কবির খোকন বাংলানিউজকে বলেন, ‘অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম হোসেনের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর পরই বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রদলের জন্য এই বিষয়টি গর্বের যে, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক একটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক দিন ধরে শিক্ষকতা করেছেন। ‘
জানাজা শেষে মরদেহ অধ্যাপক গোলাম হোসেনের নিজ বাড়িতে (কাপাশিয়া) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ অফিস সূত্রে জানা যায়।
এদিকে, অধ্যাপক গোলাম হোসেনের মৃত্যুতে মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস সাসপেন্ড করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
পর সোমবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন অধ্যাপক গোলাম হোসেনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক গোলাম হোসেনের মৃত্যুতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার শোকাহত। তার মৃত্যুর জন্য মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস সাসপেন্ড করা হচ্ছে।
অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম হোসেনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, আগামী ২ আগস্ট বাদ জোহর ক্যাম্পাসের বাসভবনে মিলাদ মাহফিল এবং ৩ আগস্ট তার তরগাঁও গ্রামের বাড়িতে বাদ জুমা মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
৩০ জুলাই সোমবার সাভারের আশুলিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম হোসেন নিহত হন।
বাসায় ফেরার পথে তাকে বহনকারী একটি প্রাইভেটকার আশুলিয়ায় দাঁড়ানো একটি ট্র্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা মারলে তিনি এবং চালক গুরুতরভাবে আহত হন। পরে তাদের উত্তরার আই. সি. হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় প্রাইভেটকারের চালক আকাশের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অধ্যাপক ড. মো. গোলাম হোসেন স্ত্রী, ৩ মেয়ে ও এক ছেলেসহ অগণিত শিক্ষার্থী, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানায়।
রাজনৈতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম হোসেন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন। তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন, যার অধিকাংশই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে লেখা।
এছাড়াও দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধসমূহও ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে। ১৯৮৪ সালে তিনি ভারতের রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন বাংলাদেশ ‘জাতীয়তাবাদী দল: একটি রাজনৈতিক বিশ্লেষণ’ বিষয়ে।
অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম হোসেন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওপর তার ৩১টি গবেষণাপত্র দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম হোসেনের লেখা বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি: একটি সামরিক শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ট্রান্সফরমেশন (১৯৮৮), সিভিল বাংলাদেশে সামরিক সম্পর্ক: একটি তূলনামূলক স্টাডি (১৯৯১), বাংলাদেশ: সরকার ও রাজনীতি (১৯৯২), স্থানীয় শাসন এবং বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাস (২০০৭)।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১২
সম্পাদনা: রাফিয়া আরজু শিউলী, নিউজরুম এডিটর