সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজে অনার্স কোর্স চালুর জোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ সুনামগঞ্জের সচেতন মহল।
এখানে অনার্স না থাকার কারণে এ অঞ্চলের ছাত্রীদের সুনামগঞ্জের একমাত্র মহিলা কলেজ ছেড়ে অন্য কলেজে ভর্তি হতে হয়।
এছাড়া শিক্ষক সংকট, শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা, ছাত্রীদের কমনরুমের অভাব, ছাত্রী হোস্টেলের আসন স্বল্পতা, সীমানা প্রাচীর না থাকা এবং অতিথি শিক্ষক দিয়ে পড়ানোর বিষয়টিই সুনামগঞ্জ মহিলা কলেজের মূল সমস্যা।
ইংরেজি, ইসলামের ইতিহাস ও অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পড়ানো হয় অতিথি শিক্ষক দিয়ে। এসব সমস্যায় নিমজ্জিত কলেজটি।
প্রতিষ্ঠাকাল: সুনামগঞ্জ জেলার নারী শিক্ষার উন্নয়নের লক্ষে ১৯৮৬ সালে দেড় একর জমির ওপর কলেজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে মাত্র ১১ জন ছাত্রী নিয়ে কলেজটি উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আলী হায়দার খান। এ কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন বি.সি দেবনাথ।
১৯৯৬ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের চেষ্টায় কলেজের একাডেমিক ভবন ও ছাত্রী হোস্টেল নির্মিত হয়। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কলেজটি সরকারিকরণ হয়।
বর্তমান অবস্থা: বর্তমানে এ কলেজে বাংলা, ইংরেজি, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, গণিত, পরিসংখ্যান, প্রাণিবিদ্যা, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, মনোবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয় চালু রয়েছে। তবে ইংরেজি, ইসলামের ইতিহাস ও অর্থনীতির শিক্ষক নেই ২ বছর ধরে।
দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী নাসিফা নুসরাত বাংলানিউজকে জানান, এখানে যখন ডিগ্রি ক্লাস শুরু হয়, তখন শ্রেণীকক্ষের অভাবে তাদের অপেক্ষা করতে হয়। শ্রেণীকক্ষ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
সুনামগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও কলেজের সাবেক শিক্ষক খায়রুল হুদা চপল বাংলানিউজকে জানান, ভাটি অঞ্চলের নারীদের উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু করা এখন সময়ের দাবি ।
একাদশ শ্রেণীর মিতা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, তার বাড়ি জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদের টেক গ্রামে। শহরে তার কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাসা নেই এবং কলেজে ছাত্রী নিবাস আসন সংকটের কারণে গ্রাম থেকে প্রতিদিন পায়ে হেঁটে, রিকশা ও নৌকায় আসতে হয় তাকে।
একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী জাকিয়া আক্তার বাংলানিউজকে জানান, কলেজে ছাত্রীদের খেলার বা বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই ছাত্রী মিলনায়তন (কমন রুম)।
একই শ্রেণীর ছাত্রী মাহফুজা আক্তার বাংলানিউজকে জানান, ছাত্রী হোস্টেলে একই কক্ষে গাদাগাদি করে ৬ জন থাকতে হয় তাদের।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বিলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এ বছর কলেজে বিএ এবং বিএসএস কোর্স চালু হয়েছে। ডিগ্রিতে ৮৯ জন ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। একাদশ শ্রেণীতে ৬শ ০৩, দ্বাদশ শ্রেণীতে ৪শ ৭১ ও ডিগ্রিতে ৮৯ জন ছাত্রী রয়েছে।
কলেজের জন্য জায়গা চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রী হোস্টেলের জন্য আবেদনটি তার কাছে আছে। শহরের ভালো জায়গায় সরকারি খাস জমি খোঁজা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ-৪(সদর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মতিউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তার প্রচেষ্টায় কলেজে ডিগ্রি কোর্স চালু হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১২
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী ও মাহাবুর আলম সোহাগ নিউজরুম এডিটর
আগামীকাল সোমবার পড়ুন মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজের প্রতিবেদন