ঢাকা: সম্ভাবনাময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখতে কিছু সমস্যার যথাযথ সমাধান এবং সরকারি সহযোগিতা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং সুনাম বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং দেশের জাতীয় উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে অধিক সক্ষম হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।
মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান ড. মোঃ সবুর খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল আগারগাঁও ইউজিসি ভবনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের প্রস্তাব নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজের সাথে বৈঠক করেন।
সমিতির পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরে ১৩ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
১. অলাভজনক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ভ্যাট ও ট্যাক্স রহিতকরণ: ক্রয়কৃত উপকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন, জমি ক্রয় এবং ক্যাম্পাস ভাড়ার উপর আরোপিত সকল ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২. পিএইচডি প্রোগ্রাম ও গবেষণার অনুমোদন: সক্ষম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমতি প্রদান এবং গবেষণার একাডেমিক ক্রেডিট অন্তর্ভুক্ত করা।
৩. দক্ষতা-ভিত্তিক শিক্ষা ও স্বল্পমেয়াদি বিশেষায়িত কোর্স চালুর অনুমোদ: শিল্প ও একাডেমিয়ার মধ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে পাঠ্যক্রম তৈরি এবং স্বল্পমেয়াদি কোর্স চালু করা।
৪. গবেষণায় অর্থায়ন: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য সরকারি তহবিল বরাদ্দ এবং উৎকর্ষতা অর্জনকারী শিক্ষকদের স্বীকৃতি প্রদান করা।
৫. র্যাঙ্কিং ও গুণগত মান নিশ্চিতকরণ: একাডেমিক মান উন্নয়ন ও স্বীকৃতির জন্য একটি স্বচ্ছ র্যাঙ্কিং ব্যবস্থা প্রণয়ন করা।
৬. প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস: নতুন প্রোগ্রাম, শিক্ষক নিয়োগ এবং অবকাঠামো উন্নয়নের প্রক্রিয়া সহজীকরণ।
৭. সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা: সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা।
৮. স্বায়ত্তশাসন ও একাডেমিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন ও একাডেমিক স্বাধীনতা প্রদান করা।
৯. ইউজিসি’র আধুনিকীকরণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি: ইউজিসি’র কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণ।
১০. ভিসি, প্রোভিসি এবং ট্রেজারার নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণ: যোগ্যতা ভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা।
১১. উচ্চশিক্ষাকে অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা: শিক্ষার উন্নয়নে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার উপর গুরুত্বারোপ করা।
১২. শাখা ক্যাম্পাস ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শাখা ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি প্রদান।
১৩. ক্যাম্পাস নির্মাণে সহায়তা: ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য সরকারি খাস জমি বরাদ্দ এবং স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, উল্লেখিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা হলে দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা খাত আরও শক্তিশালী হবে এবং বাংলাদেশকে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। সমিতি সরকারের সাথে যৌথভাবে কাজ করার মাধ্যমে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ বলেন, পরিবর্তীত সময়ে নতুনভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কাজ করবে। যার সুফল সবাই পাবেন। উল্লেখিত সমস্যাবলীর বেশিরভাগের যৌক্তিক সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কাজ শুরু করেছে। পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে এগিয়ে আসতে হবে, বিশেষ করে প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান তথা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির ভূমিকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
প্রফেসর ড.মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, গবেষণাসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ ও অবদান নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরেজমিন পরিদর্শন, সক্ষমতা নিরূপণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়ের মাধ্যমে নতুন কোর্সর চাহিদা ও অনুমোদন করা হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে একসাথে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২৪
এমআইএইচ/এমএম