জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) চিকিৎসা কেন্দ্রটির বেহাল দশা। দেশের একমাত্র আবাসিক এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা কেন্দ্রটি শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭৪ সালে এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। চিকিৎসা কেন্দ্রটি প্রথমে আল-বেরুনী হলের সিঁড়ির নিচে স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে হল নির্মাণের সময় ঠিকাদারদের থাকার জন্য নির্মিত রুমে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে আরো দুটি রুম তৈরি করা হয় চিকিৎসা সেবার জন্য।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪২ বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিভাগ চালু হচ্ছে, নতুন হল তৈরি হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসা কেন্দ্রটির উন্নয়নের জন্য প্রশাসন কোনো উদ্যোগই নেয়নি। এছাড়া প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়লেও চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ নেই। এসব অভিযোগ খোদ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের।
বর্তমানে ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। তাঁদের চিকিৎসার জন্য মাত্র ৮ জন ডাক্তার রয়েছেন এই চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে। এছাড়া রোগী পরিবহনের জন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে।
চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে অসুস্থদের স্বাস্থসেবা দেওয়ার জন্য চারটি জীর্ণ বেড রয়েছে যাতে রোগী বসলেই নড়তে থাকে। এছাড়া ভবনটির দেয়াল ও ছাদ থেকে নিয়মিত সিমেন্ট খসে পড়েছে। এর আগে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ছাদের সিমেন্ট খসে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে মানসম্মত ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও অত্যন্ত নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। চিকিৎসা কেন্দ্রে ক্যাপসুল, ট্যাবলেট, ইনজেকশন, সেরাপ অ্যান্টাসিডসহ মাত্র ১২-১৫ প্রকারের ওষুধ আছে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় এই ক্যাম্পাসের ভেতরেই মানুষের চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকার কথা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪২ বছর হলেও এখনো পর্যন্ত এই আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একটি পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা কেন্দ্র নেই। কোটি কোটি টাকা দিয়ে বাসস্থানের জন্য হল নির্মাণ করা গেলে চিকিৎসা কেন্দ্রের উন্নয়ন কেন হবে না?
চিকিৎসা কেন্দ্রের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর এই চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ থাকে ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এই বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। তবে ওষুধসহ চিকিৎসার অন্যান্য সরঞ্জামের দাম যে হারে বেড়েছে সে তুলনায় এই বাজেট দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থসেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. এটিএম আবদুল হান্নান বলেন, “চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য বরাদ্দ কম থাকায় আমরা চেষ্টা করলেও চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে পারি না। এই বছর কেবল এক লাখ টাকা বরাদ্দ বেড়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। মেডিকেল যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে, ওষুধের দামও বেড়েছে। ”
তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পাসবাসীর চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থসেবা দেওয়ার জন্য নতুন চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। এই চিকিৎসা কেন্দ্র নির্মাণের জন্যে এক কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে এক কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাজেট থেকে ১৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, “আশা করি, আগামী নভেম্বরের দিকে আমরা কাজ শুরু করতে পারব এবং আগামী বছর জুন-জুলাইয়ের দিকে কাজ শেষ হবে। ”
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর