সিলেট: ব্যানার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) প্রশাসনের একটি বিবৃতিকে ঘিরে উত্তাল রয়েছে ক্যাম্পাস। এই ইস্যুতে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে সিকৃবির উপাচার্যসহ (ভিসি) কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে ফটকে তালা ঝুলিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে সিকৃবিতে ছাত্রদল-এলাকাবাসীর সঙ্গে ‘ছাত্রলীগ-সমর্থিত শিক্ষার্থীদের’ সংঘর্ষ-এমন শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যানারও ছেঁড়া হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি বিবৃতি সামনে সামনে আসে।
এতে বলা হয়, কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে টানানো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তা-সংবলিত ব্যানার এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশনা-সংবলিত ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এমন ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কর্মকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকাল থেকে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এবার ভাইস চ্যান্সেলরসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ভেতরে রেখে তালা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ভিসি, শিক্ষক, কর্মকর্তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রায় ছয় ঘণ্টা বৈঠকেও তাদের আট দফা দাবি আদায়ের কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের আন্দোলন অব্যাহত রাখেন এবং ভিসি ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এমনটি জানা গেছে ক্যাম্পাস সূত্রে।
বৈঠকে আট দফা দাবির তাৎক্ষণিক সমাধান চায় আন্দোলনকারীরা। এরমধ্যে প্রক্টর, অ্যাডভাইজার প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ, ৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৪০ মার্কের পাস দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। কিন্তু সেগুলো খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলাতে বৈঠকে নিষ্পত্তি হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ফটকে টানানো ছাত্রদলের ব্যানার ছিঁড়ে নিয়ে বহিরাগতদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পরিক্ষার্থীদের সহায়ক নির্দেশিকা ব্যানারও ছিড়ে ফেলা হয়।
এ ঘটনায় সংঘর্ষে প্রক্টরসহ শিক্ষার্থীদের অন্তত ১০ জন আহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলনে নামেন এবং ৮ দফা দাবি জানান।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে আন্দোলন জোরদার করেন এবং প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এ বিষয়ে জানতে সিকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক আলিমুল ইসলামকে কল দিলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।
এর আগে গত রোববার তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রদলের ব্যানারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে টানানো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহায়তা-সংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি বিবৃতি ড্রাফট (খসড়া) করেছিলাম। ছাত্রদলের ব্যানারের সঙ্গে ভর্তির ব্যানার ছেঁড়া রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধের শামিল কি না, তা উল্লেখ করা হলেও তা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়নি।
সেটি কীভাবে প্রকাশ পেল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান উপাচার্য।
তিনি বলেন, ভর্তি নস্যাৎ করতে সারা দেশে এরকমই হচ্ছে। এ পেছনে একটি মহল ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সার্বিক বিষয় খতিয়ে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। আজই কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসে আলোচনা করে সুরাহার চেষ্টা চলছে বলেও জানান উপাচার্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, গণমাধ্যমে পাঠানো চিঠি রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ছিল। কিন্তু বিষয়টি স্কিপ করে যাচ্ছেন ভিসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৪
এনইউ/এএটি