ঢাকা: ৩৩তম বিসিএসের লিখিত (বাধ্যতামূলক) পরীক্ষা অংশবিশেষ স্থগিত করেছে সরকারি কর্ম-কমিশন (পিএসসি)। অনিবার্য কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে পিএসসি থেকে দাবি করা হলেও বাংলানিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফাঁস হয়ে যাওয়া চারটি প্রশ্নপত্রের কপিও বাংলানিউজের হাতে এসে পৌঁছেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হল, জগন্নাথ হল, সার্জেন্ট জহিরুল হক হল এবং বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ নেতারা এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খোদ ছাত্রলীগের একাধিক নেতাও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওইসব হলের ছাত্রলীগ নেতাদের এর সঙ্গে জড়িত থাকার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
পিএসসি’র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নেসার উদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, গণমাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর বেরিয়েছে। পরীক্ষার্থীরা যাতে বিভ্রান্ত না হন সেকারনেই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাকে সামনে রেখে আমরা আগে থেকেই গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছিলাম। পিএসসি’র চেয়ারম্যান আমাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন। এখনো এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারিনি। তবে চেষ্টা চলছে। ’’
জানা গেছে, শনিবার বিকেল থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর চাউর হলে গণমাধ্যমকর্মী ও পরীক্ষার্থীরা পিএসসি’র কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র ও পিএসসি’র প্রশ্নপত্র হুবহু মিলে যায়।
তবে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদি হাসান শনিবার রাত ৯টার দিকে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘ছাত্রলীগ মেধাভিত্তিক রাজনীতি করে। আমি যতোদূর জানি, ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী এ প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত না। ’’
পিএসসি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন শনিবার সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে জানান, রোববার ৭ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়েছে। তবে ৩০ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় পদসংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগুলো চলবে।
স্থগিত পরীক্ষাগুলোর তারিখ পরে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছিলো। শনিবার সন্ধ্যা থেকে বিষয়টি আরও জোরেশোরে শোনা যায়। বাংলানিউজের একটি অনুসন্ধানি টিম শনিবার সন্ধ্যা থেকেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিলো। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে ফাঁস হয়ে যাওয়া চারটি প্রশ্নপত্রের সন্ধান পাওয়া যায়।
গত কয়েক দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজে ৩৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে-এমন গুঞ্জন জোরেশোরে শোনা যাচ্ছিল। বাংলানিউজসহ বেশ কয়েকটি পত্র-পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশন করা হয়।
স্থগিত পরীক্ষার বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, তারা গত কয়েক দিনে প্রশ্ন ফাঁসের গুঞ্জন শুনে আতঙ্কিত। ২-৩ লাখ টাকা দিলে ৩৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার প্রত্যেকটি প্রশ্নের সবক`টি সেট দেওয়া হচ্ছে বলে তারা শুনেছেন।
সূত্র জানায়, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত চক্রটি কৌশলে কাজ করছে। যারা লক্ষাধিক টাকা দিয়েছেন, তাদের একটি গোপন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্রগুলো দেওয়ার কথা ছিল।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা জড়িত আছেন বলেও সূত্র জানায়।
এদিকে পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য পিএসসিকে ধন্যবাদ। গত কয়েকদিন ধরে ভালো করে পড়তেও পারছিলাম না। গত বেশ কয়েকটি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। সে কারণে এই গুজবেও দারুণ আতঙ্কের মধ্যে আছি। যদি বিসিএসের প্রশ্নও ফাঁস হয়ে যায়, তাহলে আমরা যাবো কোথায়?’’
পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত চক্রকে ধরার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। তারা গণমাধ্যমের সহায়তাও কামনা করেন।
চার হাজার ২০৬টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য এ বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি ৩৩তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। গত ১ জুন প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পৌনে দুই লাখের বেশি পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেন। গত ২৮ জুন প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় ২৮ হাজার ১৬২ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন। রোববার থেকে মোট ২৬টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০১২
এমএমকে/ এআই/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর