ঢাকা: সারাদেশে রোববার থেকে শুরু হওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার প্রথম দিনে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬৮ হাজার ১৫৫ জন। অসদুপায় অবলম্বনের কারণে বহিষ্কৃত হয়েছে ১৫ জন যাদের মধ্যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এ তথ্য দেওয়া হয়।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, গ্রেফতারদের একজন পটুয়াখালীর দুমকি এবং আরেকজন পাবনার সাঁথিয়া কেন্দ্রের। দু’জনই প্রক্সি পরীক্ষা দিতে এসেছিলো বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নজমুল হুদা।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে মাদ্রাসা বোর্ডের সর্বাধিক ১২ জন রয়েছে। গ্রেফতার দু’জনও ওই বোর্ডের। বহিষ্কৃত বাকি তিন জনের মধ্যে দুই জন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এবং অন্যজন দিনাজপুর বোর্ডের।
মোট অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে স্কুলের ৮টি বোর্ডে ৩৮ হাজার ৮২৮ জন ও মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষায় ২৯ হাজার ৩২৭ জন অনুপস্থিত ছিলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব শিক্ষার্থীর অনেকেই ফরমপূরণ করেও পরীক্ষা দিতে আসেনি।
তবে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর প্রায় সবাই বিশেষ পরীক্ষার্থী। অর্থ্যাৎ এদের অনেকেই রেফার্ড পরীক্ষার্থী। তাদের হয়তো বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা ছিলো না। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে নিয়মিত কেউ নেই বলেও জানান মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। আর প্রায় সব বোর্ডেরই এই একই চিত্র বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রথমদিন রোববার জেএসসিতে বাংলা প্রথমপত্র আর জেডিসিতে বাংলা সাহিত্যের পরীক্ষা ছিলো। মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, সারাদেশে নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাতিষ্ঠানিক ও শিক্ষকদের ছত্রচ্ছায়ায় নকলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সকালে ঢাকার ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এসময় শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নোমার উর রশীদ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন, মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুন নূর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনের সময় শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “এই পরীক্ষার কারণে ঝরে পড়া অনেকটা কমে আসছে। জেএসসি/জেডিসি এবং প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরুর আগে এসব বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব ছিল না। এখন নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে, ঝরে পড়ার হার কত। ”
তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, “২০১০ সালে জেএসসিতে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৮০২ জন। এ তিন বছরে পরীক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৪লাখ ১৫হাজার ৫৬৩ জন। ” এ সময় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
উল্লেখ্য, গত বছরের চেয়ে এবার এ পরীক্ষায় ৪৭ হাজার ২৫২ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে। যেখানে গত বছর জেএসসি ও জেডিসিতে ১৮ লাখ ৬১ হাজার ১১৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। এবার জেএসসিতে ১৫ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এরমধ্যে ৮ লাখ ২৬ হাজার ৮২ জন ছাত্রী এবং ৭ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৩ জন ছাত্র। আর জেডিসিতে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭৯০ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। যাদের মধ্যে এক লাখ ৮৫ হাজার ৪২১ জান ছাত্রী এবং এক লাখ ৬৯ হাজার ৩৬৯ জন ছাত্র।
আর এবার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১০ লাখ ১১ হাজার ৫০৩ জন ছাত্রী এবং ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬২ জন ছাত্র। ছাত্রদের চেয়ে এবার এক লাখ ১৪ হাজার ৬৪১ জন বেশি ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে।
এছাড়া, এবার জেএসজিতে এক লাখ ৪৯ হাজার ৩৯২ জন এবং জেডিসিতে ২৩ হাজার ২৯২ জন অনিয়মিত পরীক্ষার্থী রয়েছে। আর জেএসসিতে এক লাখ ৩৬ হাজার ৭১১ জন এবং জেডিসিতে ২০ হাজার ৩০১ জন বিশেষ পরীক্ষার্থী (এক থেকে তিন বিষয়ে অকৃতকার্য) অংশ নিচ্ছে।
এ বছর দেশের বাইরে বিদেশের সাতটি কেন্দ্রের মধ্যে জেদ্দায় ১০৬ জন, রিয়াদে ১০৯, ত্রিপলীতে আট, দোহায় ৭২, আবুধাবীতে ৩৯, দুবাইয়ে ১৮ এবং ৩৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে।
বাংলা ২য় পত্র, ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্র এবং গণিত ছাড়া সব বিষয়ের পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নে হবে। শ্রবণ প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধীরা নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছাড়া অন্য প্রতিবন্ধী যাদের হাত নেই বা হাত দিয়ে লিখতে পারে না তাদের জন্য শ্রুতি লেখকের সুযোগ রাখা হয়েছে।
পরীক্ষা চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। আর ডিসেম্বরের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, এবার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় দেশের ২৭ হাজার ৬৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ১৯ লাখ ৮ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। দেশের দুই হাজার ২৫০টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১২
এমএন/সম্পাদনা: জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর