খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়(খুবি) প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই যুগ পূর্ণ করতে যাচ্ছে। ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) দিবস।
সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রমের ২১ বছর পূর্ণ করলো।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ বাংলানিউজকে জানান, ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সরকারি সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ তৎকালিন রাষ্ট্রপতি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। ১৯৯০ সালের জুনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন জাতীয় সংসদে পাশ হয়। গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় ৩১ জুলাই।
১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪টি ডিসিপ্লিনে ৮০জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাস শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়।
১৯৯১ সালের ২৫ নভেম্বর ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
২০০২ সালের ২৫ নভেম্বর ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে প্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের নিরলস প্রচেষ্টা ও দীর্ঘদিনের আন্দোলন। প্রশিক্ষিত, দক্ষ ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন মানবসম্পদ সৃষ্টি, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় গবেষণার মাধ্যমে দেশকে সমৃদ্ধির সোপানে এগিয়ে নেওয়া এবং সম্ভাবনার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশে শিক্ষা ও গবেষণার কাজ এগিয়ে চলেছে।
মহানগরী খুলনা থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক সংলগ্ন ময়ূর নদীর পাশে এক মনোরম পরিবেশে গল্লামারীতে এ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত।
প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সময়ের চাহিদার নিরিখে এখানে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এবং বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিষয় দেশে স্নাতক পর্যায়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চালু করা হয়। এছাড়া স্থাপত্য ও ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কোর্স ঢাকার বাইরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয় প্রথম।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু হয়।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৫টি স্কুলের (অনুষদ) অধীনে ২১টি ডিসিপ্লিন (বিভাগ), একটি ইনস্টিটিউটে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত ব্যাচেলর ডিগ্রি, ব্যাচেলর অব অনার্স ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রি, এম.ফিল. (মাস্টার্স অব ফিলোসফি) এবং পিএইচ.ডি. (ডক্টর অব ফিলোসফি) প্রদান করা হয়।
স্কুলগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের অধীনে রয়েছে আর্কিটেকচার, আরবান অ্যান্ড রুরাল প্লানিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থ, রসায়ন বিজ্ঞান এবং পরিসংখ্যান বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন ইত্যাদি।
জীব বিজ্ঞান স্কুলের অধীনে রয়েছে ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রোটেকনোলজি, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স, ফার্মেসি ও সয়েল সায়েন্স ডিসিপ্লিনস।
ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের অধীনে আছে ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন। কলা ও মানবিক স্কুলের অধীনে রয়েছে ইংরেজি এবং বাংলা ভাষা ও সাহিত্য ডিসিপ্লিন। সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের অধীনে আছে অর্থনীতি, সমাজ বিজ্ঞান ও ডিভেলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিন। একমাত্র ইনসিটটিউটের নাম চারুকলা ইনস্টিটিউট।
এছাড়া সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড স্টাডিজ অন দি সুন্দরবনস (সিআইএসএস), রিসার্স সেল, মডার্ণ ল্যাংগুয়েজ সেন্টার ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ শিক্ষা ও গবেষণা কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক সংখ্যা ৩২৯ জন। ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি, এর মধ্যে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী ১৮ জন। এছাড়া কর্মকর্তা ২০১ জন এবং কর্মচারী রয়েছে ৩ শতাধিক।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিশেষ করে নবীন শিক্ষকরা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ বিশেষ করে অষ্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় স্কলারশিপ পাচ্ছেন। দেশী-বিদেশি সংস্থার গবেষণা সহায়তাও বাড়ছে। শিক্ষা ও গবেষণা কর্মকাণ্ডের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
এরইমধ্যে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার বিশেষজ্ঞগণ, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, বিজ্ঞানী ও গবেষকগণ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন। কানাডা, জাপানসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার সুযোগ বাড়াতে ক্যাম্পাসে এরইমধ্যে কয়েকটি আন্তর্জাতিকমানের গবেষণাগার স্থাপিত হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রয়েছে ৩টি একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, ভাইস-চ্যান্সেলরের বাসভবন, তিনটি আবাসিক হল, মেডিকেল সেন্টার, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৫টি বাসভবন। ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকদের জ্ঞান সহায়তায় রয়েছে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন ও শার্লী ইসলাম গ্রন্থাগার ভবন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাফ্যল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রাক্কালে বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর (অতিরক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বাংলানিউজের মাধ্যমে সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমিত সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতায় বর্তমানের প্রচেষ্টায় আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মানসেই নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ’’
খুবির জনসংযোগ প্রকাশনা বিভাগের উপ-পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে জানান, ২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হলেও দিনটিতে আশুরার (মহরমের) ছুটি থাকায় এ দিবসের কর্মসূচি পালিত হবে ২৪ নভেম্বর।
তিনি আরও জানান, গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট হতে দিনব্যাপী রক্ত গ্রুপিং, সকাল ১০টায় বর্ণাঢ্য ৠালী (খুবি ক্যাম্পাস হতে বাসযোগে শিববাড়ী মোড়, শিববাড়ী মোড় হতে পাঁয়ে হেঁটে-ময়লাপোতা হয়ে রয়েল চত্বর, রয়েল চত্বর থেকে বাসযোগে খুবি ক্যাম্পাস), বাদ যোহর বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল, বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যা ৬টায় শহীদ মিনার চত্বরে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন।
এছাড়া ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা, হলসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন ও ক্যাম্পাস পরিস্কার পরিচ্ছন্নকরণ এর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১২
সম্পাদনা: জয়নাল আবেদীন, নিউজরুম এডিটর; নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর [email protected]