সিলেট: নিজেদের স্মৃতি বিজড়িত এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার কাজের উদ্বোধন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
বুধবার সকাল ১০টায় ছাত্রবাসের পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তারা।
এরপর ছাত্রবাস মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী ।
এসময় মন্ত্রীরা বলেন, ‘‘অগ্নিসংযোগকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিগগিরই বিশেষ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে এবং এজন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের একটি তদন্তও চলছে। ”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘‘ছাত্রবাসে অগ্নিসংযোগ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দোষীকে চিহ্নিত কররা জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রলায়ে আমার ও শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে সভা হয়েছে। যারা দোষী তাদের শাস্তি হবে। ”
অর্থমন্ত্রী জানান, দোষীদের অগ্নিসংযোগের অনেক ছবি এবং অগ্নিসংযোগ মুহূর্তের তোলা ফুটেজ তিনি নিজেও পেয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, “ইতিমধ্যে সারাবিশ্বে দাবি ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে অবিকল আগের নির্মাণশৈলীতে এর পুনর্নির্মাণ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুত এ কাজ সম্পন্ন হবে। ”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “তৎকালীন আসামের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং তৎকালীন পাকিস্থানে সেরা ৫ কলেজের একটি ছিল এমসি কলেজ। এর দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এমন একটি ঘটনায় সিলেটবাসীর গায়ে কলঙ্কের কালি লেপন করা হয়েছে। সেজন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের তদন্ত চলছে। ”
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইজিপি ও অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতি সবাই বসে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ অপরাধ যারা করেছে তাদের কোনো রেহাই নেই। তাদেরকে আইনের কাছে ধরা দিতে হবে। ”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের শত বছরের ঐতিহ্যময় এরকম ছাত্রাবাস দ্বিতীয়টি নেই। এখানে অগিনসংযোগ সব বয়সের মানুষকে বেদনা দুঃখ দিয়েছে। তাই দেশ-বিদেশের সিলেটবাসীর দাবি অনুযায়ী ‘ছাত্রবাসটি যেরকম ছিল ঠিক সেরকম করে পুনঃনির্মাণ করা হবে। এজন্য অর্থমন্ত্রণালয় অনুমোদন করেছে। ”
পরবর্তী ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় ঐতিহ্যবাহী এমসি ছাত্রাবাস অন্তর্ভুক্তির জন্য শিক্ষামন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলেও তার বক্তব্যে জানান।
ছাত্রবাস পুনর্নির্মাণ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, “এটি যেরকম তৎকালীন আসামের সবচেয়ে দামি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো, এবারও দেশের সবচেয়ে ভালো দামি কাঠ দিয়ে এর পুনর্নির্মাণ করা হবে। ”
এমসি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেরস ধীরেশ চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশনে মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি, সৈয়দা জেবুন্নোস হক এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল্লাহিল আজাদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ছাত্রাবাসটি ঠিক আগের মতো নির্মাণ করতে ব্যয় হবে ৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়া ছাত্রাবাসের ৩টি ব্লকের ৮৪টি কক্ষ নির্মাণ করা হবে। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাকি ৩টি ব্লকের ছাত্রাবাসের দরজা-জানালাসহ অন্যান্য সংস্কার কাজ করা হবে।
এছাড়াও ছাত্রাবাসের ৬টি ব্লকের তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষককের আবাসিক বাসভবনেরও সংস্কার কাজ করা হবে। তবে এতে পুরাতন কাঠামো ও শৈলীর একবিন্দুও পরিবর্তন করা হবে না।
ছাত্রবাসটি অবিকল আগের চেহারায় ফিরিয়ে দিতে সময় লাগবে প্রায় ৬ মাস। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে ২০১৩ সালের জুন মাসে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই ছাত্রলীগ-শিবির রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জের ধরে অগ্নিসংযোগ করা হয় এ ছাত্রাবাস। কলেজ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনে গঠিত তদন্তে ‘বহিরাগত ছাত্রলীগকে’ অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১২
এসএ/ সম্পাদনা: কাজল কেয়া, নিউজরুম এডিটর/আরআর