ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবির ৯ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার

ওয়ালিউল্লাহ, জাবি প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১২
জাবির ৯ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীদের মারধর ও মহান বিজয় দিবসে বিশেষ খাবার ফাও খাওয়াকে কেন্দ্র শিক্ষককের সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় মোট ৯ শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেট সচিব আবু বকর সিদ্দিক এ তথ্য জানান।



সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া এই সিদ্ধান্তের মধ্যে সাংস্কৃতিক জোটের নেতা-কর্মীদের মারধর ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থী ও শিক্ষককের সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় ৫ শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করা হয়।

সাংস্কৃতিক জোটের নেতা-কর্মীদের মারধরের ঘটনায় বহিস্কৃতরা হলেন, মওলানা ভাসানী হলের ৩৬তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এসএম মাহতাব মেহেদি সম্রাট ১ মাস বহিস্কার ও ৩ হাজার টাকা জরিমানা সঙ্গে ৩ মাস ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত, বাংলা বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো: জাহাঙ্গীর আলম অর্ণব, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান শাকিল, দর্শন বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এমজি রাব্বী রানা ২ মাস বহিস্কার ও ২ হাজার টাকা জরিমানা সঙ্গে ২ মাস ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত।

এছাড়া রিভিও কমিটির পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের এমফিল গবেষক শেখ শরিফুল ইসলাম শরিফ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহমেদ ও বিবিএ প্রোগ্রামের ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিঠুন কুমার কুন্ডুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

সিন্ডিকেটে ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’র সভাপতি কলি মাহমুদ ও সহ-সভাপতি মঈন মুনতাসিরকে বিভ্রান্তিমূলক কাজ না করার জন্য সতর্ক করা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেট সচিব আবু বকর সিদ্দিক জানান।

জানা যায়, গত ২৮ এপ্রিল তৎকালীন উপাচার্যপন্থী হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠি, রড ও লোহার পাইপ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মীদের বেধড়ক মারধর করে। এই ঘটনায় ২৯ এপ্রিল রোববার ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের জন্য শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা’ অনুযায়ী তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির।

কমিটির প্রধান করা হয় প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানকে। সদস্য অধ্যাপক আহমেদ রেজা এবং সদস্য সচিব করা হয় ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) মোহাম্মদ আলীকে। এই তদন্ত কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ রিপোর্ট দিতে বলা হলেও তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তীতে নতুন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক খালেদ হোসাইন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ রেজা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (টিচিং) মোহাম্মদ আলী। তদন্ত কমিটি ১৯টি সভার মাধ্যমে মোট ২২ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পর্যালোচনা করেন এবং ৮ জন অভিযোগকারীসহ সব অভিযুক্ত এবং নয়জন শিক্ষক-কর্মকর্তার সাক্ষ্য নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেন বলে জানা যায়।

উত্থাপিত তদন্ত প্রতিবেদনে ৮ জন হামলাকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল বলে জানা যায়। সুপারিশকৃত হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন, মওলানা ভাসানী হলের ৩৬তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম মাহতাব মেহেদি সম্রাট, বাংলা বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম অর্ণব, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুর রহমান শাকিল, বিবিএ প্রোগ্রামের ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিঠুন কুমার কুন্ডু, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান, দর্শন বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এম জি রাব্বী, প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের এম ফিল গবেষক শেখ শরিফুল ইসলাম শরিফ এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহমেদ।

এদের মধ্যে হামলার হুকুমদাতা হিসেবে মওলানা ভাসানী হলের ৩৬তম ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম মাহতাব মেহেদি সম্রাটকে চিহ্নিত করেছিলেন তদন্ত কমিটি।

এছাড়া ২৬ জুলাই পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সাংস্কৃতিক কর্মীদের হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত না হওয়ার পরও ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়া ও তদন্ত কমিটির পেশকৃত সুপারিশ থেকে অব্যহতির পাওয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর আবেদন করেন।

তদন্ত কমিটি ২২ জনের ওপর তদন্ত করে ১৮ জুলাই প্রতিবেদন জমা দেয়। এদিকে ২২ জুলাই রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে প্রতিবেদনটি উত্থাপন করা হলে প্রতিবেদনে হামলার সঙ্গে জড়িত নন এমন শিক্ষার্থীরও নাম এসেছে বলে অভিযোগ ওঠে।

পরবর্তী সময়ে ১১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় সাংস্কৃতিক কর্মীদের মারধরের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনটি উত্থাপিত হলে সিন্ডিকেট সদস্যরা তদন্ত প্রতিবেদনটি পুনরায় মূল্যায়নের জন্য বলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তক্রমে একটি রিভিউ কমিটি করা হয়। রিভিউ কমিটির প্রধান করা হয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেনকে। সদস্য হিসেবে ছিলেন তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা ও আল-বেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো: আনোয়ার খসরু পারভেজ।

রিভিউ কমিটির প্রতিবেদন শেষে সোমবার সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ‘জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট’ সভাপতি কলি মাহমুদ বলেন, “এটা কোনো বিচারই হয়নি। প্রশাসন বিচারের নামে প্রহসন করেছে। সঠিক বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোলনে যাব। ”

এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রোববার আয়োজিত বিশেষ খাবার ফাও খাওয়াকে কেন্দ্র করে মওলানা ভাসানী হলের সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক খবির উদ্দিন ও আবাসিক শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। পরবর্তীকালে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক খবির উদ্দিন সোমবার উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে সোমবার দুপুরে অনুষ্ঠিত ডিসিপ্লিনারি কমিটির বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ৫ জনকে ৩ মাসের বহিস্কার ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত করা হয়।

বহিস্কৃতরা হলেন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৩৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস আহমেদ, রকিবুর রহমান উল্লাস ও একই বিভাগে ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শাকিল এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৩৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি শাওন ও সিফা সালেহীন শুভ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১২
জেএনএ/সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।