ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: দেশে মেধাবিকাশ ও কর্মসংস্থানের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় দেশের টাকায় শিক্ষা লাভ করে মেধাবীরা সেবা দিচ্ছেন বিদেশে। ফলে তাদের সেবা থেকে দেশ যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের সেমিনার কক্ষে ‘উচ্চ শিক্ষায় মেধাচর্চা এবং মেধাপাচার’ শীর্ষক সেমিনারে এমনটাই ছিল বক্তাদের মতামত।
শনিবার সন্ধ্যায় ঢাবি শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘জার্নি একাডেমিয়া’ আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও ঢাবির প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাবির প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক হওয়া উপচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-উর-রশীদ প্রমুখ। সেমিনারের মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন ডাকসু’র সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম।
অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, মেধাবীরা গরীবের রক্তে ভেজা টাকায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে বিদেশে গিয়ে নানা রকম সুযোগ সুবিধা পেয়ে দেশের কথা আর মনে রাখেন না। তারা চিন্তা করে কীভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে পরিবারকে কীভাবে সেখানে নেয়া যায়। বাংলাদেশ তখন তাদের কাছে হয়ে ওঠে ‘ভুলে যাওয়া দেশ’ (ফরগটেন কান্ট্রি)।
বর্তমানের ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে মেধা বিকাশের অন্যতম প্রধান অন্তরায় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের প্রধান অন্তরায় ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অবনতি। তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ একেবারেই কমে গেছে। আমাদের সময় শিক্ষকরা প্রতিটি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্ত কিছুর খোঁজ-খবর নিতেন। এছাড়া পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগও অনেক ভালো ছিল। কিন্তু এখন তেমনটি দেখা যায়না। ’
মেধাবিকাশ ও কর্মসংস্থানের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাজেটকে অপ্রতুল হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতীয় বাজেটের মাত্র ০.৩ শতাংশ বরাদ্দ থাকে উচ্চ শিক্ষার জন্য। যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশ এমনকি সার্কভুক্ত দেশগুলোর তুলনায়ও অনেক কম। ’
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ‘মানি ইজ ম্যাটার’ বলেও মন্তব্য করেন ঢাবির প্রাক্তন এ উপাচার্য।
তিনি জানান, দেশের সন্তান যারা বিদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার অথবা তাদের মেধাকে দেশের কাজে লাগানোর চিন্তা-ভাবনা সরকারের করছে।
তিনি বলেন, ‘যারা স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসতে চান বা নির্দিষ্ট মেয়াদে দেশের প্রয়োজনে কাজ করতে চান তাদেরকে সাধ্য অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে। ’
অধ্যাপক ড. এসএমএ ফায়েজ বলেন, ‘আমাদের সময়ের তুলনায় এখনকার তরুণরা অনেক বেশি মেধাবী। এতো প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করেও তারা স্বীয় অবস্থানে মেধার যে স্বাক্ষর রাখছেন তা বিস্ময়কর। ’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশের অনুকূল পরিবেশের পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে তিনি দায় করেন ছাত্ররাজনীতি এবং প্রশাসনের উদাসীনতাকে।
তিনি বলেন, ‘একটি পত্রিকায় দেখলাম এসএম হলের শিক্ষার্থীরা বস্তির ছেলেদের মত বারান্দায় শুয়ে আছেন। তাছাড়া প্রতিটি হলেই চারজনের সিটে ৮ থেকে ১০ জন করে থাকে। আবার সিট পাওয়ার জন্য ধরতে হয় ছাত্রনেতাদের। এই পরিবেশে থেকে মেধাবিকাশ অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। ’
শিক্ষার্থীদের জন্য অনুকুল পরিবেশ তৈরিতে একমাত্র মেধার ভিত্তিতেই হলে সিট বরাদ্দ দেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে উক্ত সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, ইউআইটিসির উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম খান, ডাকসুর সাবেক জিএস মাহবুব জামান, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত প্রমুখ।
এছাড়া শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সালেহ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুদীপ্ত সাহা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুভ।
জার্নি একাডেমিয়ার সমন্বয়ক নাজমুল হোসেনের পরিচালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক।
এদিকে আলোচনার শুরু আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের নয় দশকের দুর্লভ আলোকচিত্র নিয়ে ‘অক্সফোর্ড অব দ্য ইস্ট’ শীর্ষক পিক্টোরিয়ালের মোড়ক আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। ‘জার্নি একাডেমিয়া’ প্রকাশিত এ অ্যালবামটি তৈরিতে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।
ঢাবির সচিত্রে ‘অক্সফোর্ড অব দ্য ইস্ট’
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৪