ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

মর্যাদা কমছে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের

আল-আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৪
মর্যাদা কমছে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের

ঢাকা: বাস্তবায়নাধীন বেতন স্কেলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের তুলনায় সহকারী শিক্ষকদের মর্যাদা কমছে। প্রধান শিক্ষকদের ২য় শ্রেণির পদমর্যাদা দিয়ে বেতন স্কেল দুই ধাপ বাড়ালেও সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল বাড়ছে একধাপ।

ফলে প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেলের সঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেলের পার্থক্য হবে ৩ ধাপ। অথচ বর্তমান বেতন স্কেল (২০০৬) অনুযায়ী তাদের মধ্যে পার্থক্য ২ ধাপ।

এতে করে প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ২য় শ্রেণির হলেও সহকারী শিক্ষকরা ৩য় শ্রেণির গণ্য হবেন বলে মনে করছেন সহকারী শিক্ষকরা। ফলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে কর্মস্থলে কর্মকর্তা আর কর্মচারীর ভাব সৃষ্টি হবে বলেও মনে করেন তারা।

এছাড়া প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ২য় শ্রেণিতে উন্নীত করায় বর্তমান ‘সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার’ নিয়োগ বিধি অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে তাদের (প্রধান শিক্ষক) নিয়োগ ও পদোন্নতি দেওয়া হবে। এর ফলে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হওয়া কষ্টসাধ্য হবে বলেও মনে করেন সহকারী শিক্ষকরা।

বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব শাহিনুর আল-আমীন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। বেতন স্কেলে প্রধান শিক্ষকদের একধাপ নিচে সহকারী শিক্ষকদের রাখা এবং সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে সহকারী শিক্ষক হতে শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছি আমরা।
    
তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলনে ১১ দফা দাবির মধ্যেও প্রধান শিক্ষকদের একধাপ নিচে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল দেওয়ার দাবি ছিল আমাদের। কিন্তু এসব দাবির মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হলেও আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

তিনি বাস্তবায়নাধীন এই বেতন স্কেল সংশোধনের দাবি জানান।

এছাড়া সহকারী শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়ন না করে এ বেতন স্কেল কার্যকর করলে তারা হাইকোর্টে রিট করবেন বলে জানান।

দুই দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে ৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় দেশের সব জেলায় একযোগে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলেও জানান এ শিক্ষক নেতা।

বাস্তবায়নাধীন এই বেতন স্কেল কার্যকর হলে চাকরির শুরুতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে ৬ হাজার ৪০০ টাকা বেতন পেলেও সহকারী শিক্ষকরা পাবেন ১৪তম গ্রেডে ৫ হাজার ২০০ টাকা। অন্যান্য পারিতোষিকসহ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে চাকরির শুরুতেই প্রায় ২ হাজার ১০০ টাকার আর্থিক পার্থক্য সৃষ্টি হবে।

পরবর্তীতে চাকরির ধাপ উন্নয়নে ২০০৯ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকরা ৯ম গ্রেডে এসে ১১ হাজার টাকা বেতন পাবেন। অপরদিকে সহকারী শিক্ষকরা ৩ ধাপ উন্নয়নের পরও ১২ তম গ্রেডে এসে বেতন পাবেন ৫ হাজার ৯০০ টাকা। এভাবে গ্রেড তিন ধাপ উন্নয়নের পর প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বেতনের পার্থক্য হবে প্রায় অর্ধেক।

তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, সহকারী শিক্ষকদের বেতন তো কমেনি, বরং আরও একধাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাই শিক্ষকদের উচিত এজন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। এ বিষয়ে সরকারকে দোষারোপ করা যৌক্তিক হবে না।

১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম বেতন স্কেলে চাকরির শুরুতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে বেতনের কোনো পার্থক্য ছিল না। সে সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকরা ৮ম গ্রেডে (১৯৭৩ সালের পে-স্কেলে ১০টি গ্রেড ছিল) ২২০ টাকা বেতন পেতেন।

১৯৭৭ সালের জাতীয় পে-স্কেলে প্রথমবারের মতো সহকারী শিক্ষকের তুলনায় প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল এক ধাপ নিচে চলে আসে এবং তাদের বেতনে ২৫ টাকার আর্থিক পার্থক্য তৈরি হয়।

২০০৫ সাল পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকলেও ২০০৬ সালের পে-স্কেলে সহকারী শিক্ষকের তুলনায় প্রধান শিক্ষকের বেতন স্কেল দুই ধাপ নিচে নেমে যায় এবং তাদের মধ্যে ৬০০ টাকার আর্থিক পার্থক্য সৃষ্টি হয়।  


বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।