ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

বৃত্তির অভাবে ৮০ ভাগ শিশু ঝরে পড়ে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪
বৃত্তির অভাবে ৮০ ভাগ শিশু ঝরে পড়ে

ঢাকা: শুধু বৃত্তির অভাবে শতকরা ৮০ ভাগ শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে বলে জানিয়েছেন পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
 
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করে তিনি এ তথ্য জানান।



প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ইউনিসেফ যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ প্রাইমারি এডুকেশন স্টাইপেন্ডস: অ্যাচিভমেন্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক  প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
 
তিনি বলেন, ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি)-এর মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে ২০০২-০৩ সালে শুরু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষায় বৃত্তি প্রদান কর্মসূচির নির্ধারিত
অর্থমান বর্তমানে অর্ধেকে এসে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে শতকরা ৮০ ভাগ শিশু বিদ্যালয় ছেড়ে দেয়। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক হলেও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির একজন প্রাথমিক শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক খাবার খরচ (টিফিন বাদে) পরিবারকে চার হাজার সাতশ’ ৪৪ টাকা ব্যয় করতে হয়। যা সুবিধা বঞ্চিত পরিবারগুলোর জন্য কঠিন।

তিনি বলেন, ২০০২-০৩ সালে শুরু হওয়া বৃত্তি প্রদান কর্যক্রমের শুরু থেকে প্রাথমিক শিক্ষা বৃত্তির মূল্যমান অপরিবর্তিত রয়েছে এবং প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এ বৃত্তির মূল্যমান একই।   অভাবের কারণে অনেক শিশু রয়েছে যারা বিভিন্ন মৌসুমে কৃষি কাজে পরিবারকে সাহায্য করতে সাময়িকভাবে অনুপস্থিত থাকে। যারা পরবর্তীতে পুনরায় ভর্তি হয়। তাদের ঝরে পড়ার তালিকায় ধরা হয়। কেউ কেউ বিদ্যালয় পরিবর্তন করে অন্য বিদ্যালয় ভর্তি হয়, যা এ হিসেবে রাখা হয় না।  

তিনি বলেন, ঝরে পড়া শিশুর হার কমিয়ে আনতে শিক্ষার্থীদের মানসিকতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। অনেকে রয়েছে যারা স্কুলে ভালো ফলাফল করছে অথচ তাদের দিকে নজর না দিয়ে কেবল দরিদ্রদের বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়টিও অনেক সময় বিদ্যালয় ত্যাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
 
গবেষণায় দেখা যায়, বিদ্যালয় থেকে বর্ষাকালে ছাতা, শীতকালে গরম পোশাক এবং নির্দিষ্ট সময়ে সাবান দেওয়া হলেই শিশুদের ঝরে পড়ার সংখ্যা কমে আসবে।

বৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে দেড় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত লাগবে যা এই মুহূর্তে পুরোপুরি সম্ভব নয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম.এ. মান্নানের এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এ গবেষণা প্রমাণ করেছে বৃত্তি মানে শুধুই খরচ নয়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে সবচেয়ে কম খরচ করে যা জিডিপি’র মাত্র ২.৬ ভাগ। বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার সংখ্যা কমাতে এখন সময় এসেছে বৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করার। প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন, তারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানান তিনি।
 
একইসঙ্গে পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ এবং শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে দরিদ্র এবং দুর্যোগ কবলিত এলাকায় বিস্কুটের পরিবর্তে দুপুরের খাবার সরবরাহের প্রস্তাব দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউনিসেফ’র প্রতিনিধি প্যাসকেল ভিলনোভ।

প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম.এ. মান্নান ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বক্তব্য রাখেন।

শ্যামল কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব কাজী আখতার হুসাইনসহ অন্যান্য আয়োজক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বক্তব্য রাখেন।

‘Bangladesh Primary Education Stipends: Achievements and Challenges’ প্রতিবেদনটি www.unicef.org.bd ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।