ঢাকা: ‘সব কথার শেষ কথা আপনারা শিক্ষক, আপনারা-আমরা একই পরিবার, একই টিম। আপনারা হলেন মেসি, রোনালদো...।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ১২টা ৫৬ মিনিট। ৮১ মিনিট আগে বক্তব্য শুরু করে শেষ কথায় শিক্ষামন্ত্রী বললেন, ‘আপনারা আমাকে ক্ষমা করবেন। অনেকক্ষণ ধরে ধৈর্য ধরে বক্তব্য শুনেছেন, ক্ষমা করে দেবেন। ’
৩৩তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের প্রভাষক পদে নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের ওরিয়েন্টশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের অডিটোরিয়ামে এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৯৭৫ জন শিক্ষক যোগদান করেন তাদের পেশায়।
২০০৯ সালে মহাজোট সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আবারো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত শিক্ষার অগ্রগতি, উন্নয়ন ও ভবিষ্যত কার্যক্রম তুলে ধরে দীর্ঘ বক্তব্য দেন মন্ত্রী।
মঞ্চে শিক্ষাসচিব মোহাম্মদ সাদিকসহ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ আর সামনের সারিতে আগত অতিথি, নবাগতরা শুনতে থাকেন মন্ত্রীর বক্তব্য।
সকাল ১০টার কিছু পরে সূচনা সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। প্রথমে অতিথিদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব স্বপন কুমার রায়।
এরপর নবীন প্রভাষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উম্মে গাউস কানিজ ও লাবলু সরকার।
অতিথিদের মধ্যে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ দিলারা হাফিজ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ফাহিমা খাতুন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইন, এ এস মাহমুদ এবং শিক্ষাসচিব মোহাম্মদ সাদিক বক্তব্য রাখেন।
অতিথিদের মার্যাদা অনুযায়ী শিক্ষাসচিবের পর আসে মন্ত্রীর বক্তব্যের পালা।
শিক্ষামন্ত্রী ছাত্রজীবনে ১৯৬২ সালের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ের বর্ণনা তুলে ধরেন।
মন্ত্রীর ৮১ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যে অডিটোরিয়ামের গ্যালারিতে কেউ কেউ টিপ্পনী কাটলেও মাঝেমধ্যে মন্ত্রীর হাস্যরসে নিরবতা ভেঙ্গে হাসির রোল পড়ে।
‘অনেকে বদলি হতে চায়। তিন বছর আগে সম্ভব না। বদলির জন্য তদবির করবেন না। কক্সাবাজারে দিলে মনে করবেন না শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কুয়াকাটা-কক্সবাজারে আছেন, কোন মেয়ে প্রেমে পড়বে না? আনন্দ করে আসেন। এই বয়সে না করলে কখন করবেন?’
শিক্ষামন্ত্রীর এই কথায় হাসির রোল পড়ে গ্যালারিজুড়ে।
‘ঢাকায় আসার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন। দুর্গম এলাকায় যান। এই জগতে এর চেয়ে আর মহৎ পেশা হতে পারে না। নিবেদিতপ্রাণ হয়ে পড়াতে হবে’, নবীন শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন মন্ত্রী।
বছরের শুরুতে বই তুলে দেওয়া, নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষা শুরু ও ফল ঘোষণাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারের বিভিন্ন সাফল্য নিয়ে কথা বলেন নাহিদ।
নতুন প্রজন্মকে বিশ্বমানের প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞান, দক্ষতায় শিক্ষিত করতে সব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এজন্য শিক্ষকদেরও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে দক্ষ হওয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
শিক্ষার মূল লক্ষ্য জাতীয় লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, একটি উন্নত, সমৃদ্ধ সুখী দেশ গড়ে তুলতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্বমানের জ্ঞান, প্রযুক্তি, দক্ষতায় শিক্ষা দিতে হবে। না হলে টিকে থাকতে পারব না।
‘আমরা ইতোমধ্যে ২৩ হাজার ৫০০ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুস করে দিয়েছি। সব ক্লাসরুম মাল্টিমিডিয়ায় রূপান্তর করব। সব টিচারকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। ’
প্রথমবারের মতো শিক্ষা ক্যাডারের নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের নিয়ে এমন বৃহৎ আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষকদের গুণগতমানের শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রদের মূল্যবোধের জাগরণ ঘটিয়ে সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, গুণগতমান বৃদ্ধি এবং ঝরেপড়া রোধ করাই এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ।
পাসের হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যারা মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তাদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যে মান হওয়া উচিত ছিল, সেটা আমরা অর্জন করতে পারিনি। দয়া করে মান নিয়ে প্রশ্ন না তুলে কোথায় ত্রুটি আছে তা ধরিয়ে দিন। ছেলে-মেয়দের নিরুৎসাহিত করবেন না।
সবশেষে ১টা ১০ মিনিটে প্রায় ১০ মিনিট বক্তব্য দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সোহরাব হোসাইন অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন, যিনি অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন।
** ৩৩তম বিসিএসের ৯৭৫ জন প্রভাষকের ওরিয়েন্টেশন
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৪