ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শেকৃবি’তে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, বহিষ্কার ২

শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৪
শেকৃবি’তে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, বহিষ্কার ২

ঢাকা: রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ দাসের সমর্থিত গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি নজরুল ইসলাম হলে ব্যাপক ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালিয়েছে। এ ঘটনায় দেবাশীষ সমর্থিত ২ ছাত্রলীগ নেতাকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।



বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় দিকে তারা এ হামলা চালায়। এ সময় সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের ৩০-৪০ জন সদস্য রড, গ্যাস পাইপ, হকিস্টিকসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব চালায়।

হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগের ওই সদস্যরা। হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন।

এ সময় সাংবাদিকদের হাত থেকে ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যায় তারা।

ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার প্রতিবাদ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন, আনোয়ার হোসেন, পুলক সরকার ও মাহমুদুল কবির রুমনসহ ১০-১২ জন ছাত্র গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে রুমনকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আর যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় দেবাশীষের অনুগত ছাত্রলীগ নেতা শারাফাত খানকে হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার এবং মানস কৃত্তনীয়া নয়নকে ছয় মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে শেরেবাংলা হলের অতিথি কক্ষে বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রক্টর মো. মোফাজ্জল হোসাইন, ছাত্র উপদেষ্টা ড. নূর জাহান বেগম ও বিশ্ববিদ্যাবিদ্যালয়ের তিন আবাসিক হলের প্রভোষ্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নেতাদের উপস্থিতিতে এক জরুরি সভায় এ শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে সাধারণ ছাত্ররা জানান, বুধবার দিনগত রাত ২টার দিকে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব শেরেবাংলা হলের টিভি রুমে আর্জেন্টিনা বনাম জার্মানির খেলা দেখার জন্য যায়। এ সময় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক দেবশীষ দাসের কর্মীরা তাকে জায়গা ছেড়ে অন্যত্র বসার জন্য ধাক্কা দেয়।

এ সময় মাহবুব জায়গা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মানস কীর্তনিয়া নয়ন, শরাফাত খান, মামুন, মাসুদ, নূর, সাকিব ও আরাফাতসহ প্রায় ৭-৮ জন মাহবুবকে পিটানো শুরু করে। পরে মাহবুবের বন্ধুরা সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে।

এ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মাহবুবের বন্ধু মাহমুদুল রহমান রুমন ও ফরহাদকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ১১৩ নং কক্ষের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের শরাফাতের নেতৃত্বে মাসুদ, নূর, গৌতম, রুদ্র রড, হকিস্টিক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হঠাৎ হামলা চালায়।

হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় মাহমুদুল রহমান রুমনকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ও অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়।

হামলার সময় কক্ষে অবস্থিত ফরহাদ দৌড়ে একই হলের ১১৬ নং কক্ষে লুকানোর চেষ্টা করলে, ঐ কক্ষও ভাঙচুর করে হামলাকারীরা।

এ সময় সাংবাদিকরা কক্ষ ভাংচুরের ছবি তুলতে গেলে দেবাশীষের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বাবু, আনিসুর রহমান জনি, অনি, নয়ন, মুহিত, শাহজালাল, সাকিব ,নওশাতসহ প্রায় ৪০ জন সদস্য।

এ সময় দৈনিক সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আশিকুর রহমান, বাংলানিউজের বিশ্ববিদ্যালয় করেসপন্ডেন্ট মহিবুল আলম ও যায়যায়দিন এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাদ্দাম পাটোয়ারী আহত হন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মোফাজ্জল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।

এ ঘটনার সমাধান ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৪/আপডেট ১৯০৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।