ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: জালিয়াতি ঠেকাতে প্রথমবারের মতো সেটকোড লুকানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায়। তবুও ঠেকানো যায়নি জালিয়াতি।
শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামজিক বিজ্ঞান অনুষদভূক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে পরীক্ষা চলাকালীন ক্যাম্পাসের বাইরের ১২টি কেন্দ্র থেকে ১৭ জন এবং বৃহস্পতিবার রাতে ৠাবের বিশেষ অভিযানে জালিয়াতচক্রের ১৯ জনসহ মোট ৩৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
আটককৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজি মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে জালিয়াতচক্রের দুই সদস্যকে আটক করে ৠাবের কাছে হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরে আরও ১৭ জনকে আটক করে ব্যাব। আটক ১৯ জন বর্তমানে ৠাবের হেফাজতে আছেন।
শুক্রবার বিকালে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে ৠাব আটককৃতদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবে। ৠাব সদর দফতরে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর।
হাজি মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে আটককৃত দুজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে সুমন নামের একজনকে ১০১২ নম্বর রুম থেকে এবং সাব্বির নামে একজনকে ৬৪১ নম্বর রুম থেকে আটক করা হয়।
সুমন ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী। কিন্তু সাব্বিরের বিভাগের নাম জানাতে পারেননি প্রক্টর।
ক্যাম্পাসের বাইরের ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে অগ্রণী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে ৩ জন, আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২ জন, লালবাগ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১ জন, বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে ২ জন, শেখ বোরহানউদ্দীন কলেজ থেকে ১ জন, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল থেকে ২ জন, মতিঝিল মডেল স্কুল থেকে ১ জন, সেন্ট্রাল মহিলা কলেজ থেকে ১ জন, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১ জন, মোহাম্মদপুর সেন্ট্রাল কলেজ থেকে ১ জন এবং খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ১ জনকে আটক করেন কর্তব্যরত শিক্ষকরা।
জালিয়াতির ধরণ সম্পর্কে প্রক্টর বলেন, আমরা ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষায় সেটকোড লুকানোর ব্যবস্থা করি। তাই সেটকোড অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তর পাঠানো সম্ভব হয়নি। তাই এবার তারা মোবাইল এসএমএস’র মাধ্যমে আলাদাভাবে প্রতিটি প্রশ্নেরই উত্তর পাঠায়।
জালিয়াতিতে সহায়তা করার অভিযোগ এসেছে একাধিক কেন্দ্র থেকে। এর মধ্যে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের লাইব্রেরিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে; তিনি পরীক্ষার্থীদের মোবাইল নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশে সরাসরি সহায়তা করে নিরাপদে বসার ব্যবস্থা করেন।
তাকে আটকের চেষ্টা চলছে বলেও জানান প্রক্টর।
আটক শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করে জানা যায়, কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি কেউ চেকও করেনি।
তবে কাদের সঙ্গে চুক্তি করে তারা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন সে ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেনি আটককৃতরা।
অভিযুক্ত কেন্দ্রগুলোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু কেন্দ্র বাতিল করেছি। যেসব কেন্দ্রের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ আসছে তার সত্যতা পেলে কেন্দ্রগুলোকে বাতিল করা হবে।
সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের কোনো শিক্ষক-কর্মচারী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও বাইরের মোট ৯৭টি কেন্দ্রে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীন ‘ঘ’ ইউনিটের এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
বিভাগ পরিবর্তনকারী এই ইউনিটের ১ হাজার ৪১৬টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় বিজ্ঞান, কলা ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ১ লাখ ৫ হাজার ৫১৬ জন শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৪
** ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রসহ আটক ৩৬
** ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় আটক ৩০