ঢাকা: বিরোধী জোটের টানা কর্মসূচিতে গত তিন মাসে শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে পড়েছিলো অনেকটা স্থবির। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় শিক্ষাখাত।
হরতাল না থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনটি ছিল বিএনপি জোটের অবরোধ। এই কর্মসূচির মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে পরীক্ষা।
বুধবার (০১ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র মনোবলই লক্ষ্য করা যায়।
পরীক্ষা শুরুর সময়েই বৃষ্টি। তাই ভিকারুননিসা কেন্দ্রের সামনে শত শত অভিভাবক দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রতিষ্ঠানে ফটক ও আশপাশের ছাউনিতে।
বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী ছেলে রফিকুল ইসলামকে নিয়ে এই কেন্দ্রে এসেছেন বাবা আব্দুর রহমান। অবরোধে পরীক্ষা হচ্ছে, কোনো আশঙ্কা আছে কি না- জানতে চাইলে এই অভিভাবক উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, কোথায় অবরোধ? আর হরতাল-অবরোধ নয়।
সুমাইয়া আক্তার নামে আরেক অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, অবরোধ-হরতালে পরীক্ষা হবে কি না- সে শঙ্কায় ছিলেন তারা। কিন্তু পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণায় স্বস্তি ফেরে।
হরতাল-অবরোধে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত থাকলেও সুমাইয়া আক্তার বলেন, যথাসময়ে পরীক্ষা হওয়াটাই ভালো। যারা হরতাল-অবরোধ করছে, পরীক্ষাটায় ছাড় দেওয়া উচিত।
সকালে মিরপুর থেকে বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসে করে কেন্দ্রে যাওয়ার পথে তেজগাঁও কলেজের এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক আমিনুর রহমান বলেন, পরীক্ষা হবে কি না- এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা ছিলো। যারাই হরতাল-অবরোধ করুক পরীক্ষায় ছাড় দেওয়া উচিত।
বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, সারা দেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম দিন।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ইনচার্জ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব গৌতম কুমার বাংলানিউজকে বলেন, কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
পরীক্ষা উপলক্ষে ১৪০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয় সারা দেশে। অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও শক্ত অবস্থানে ছিলো বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
ভিকারুননিসা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অন্যবারের তুলনায় এবার বেশি প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খুশি হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ পারিবেশে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।
‘শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে, যে আতঙ্কের মধ্যে শিক্ষার্থী-অভিবাবকেরা ছিলেন, এটা আজ কেটে যাবে। ’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে কমিটি করেছি। আমরা দায় এড়াচ্ছি না। যারা গোপনে বোমাবাজি করবে, সন্ত্রাসী কাজ করবে, তার জন্য দায় তাদের। তাদের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
হরতাল-অবরোধ যে কোনো পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেন, কোনো সংশয়ে ভুগবেন না। হরতাল-অবরোধ হোক বা না হোক, পরীক্ষা হবেই।
প্রথম দিন বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা ছিলো। সারা দেশে দুই হাজার ৪১৯টি কেন্দ্রে আট হাজার ৩০৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ ৭৩ হাজার ৮৮৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদিন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ হাজার ১৯৬ জন শিক্ষার্থী। যা স্বাভাবিক বলে দাবি করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব গৌতম কুমার।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৫