তিন বিঘা করিডর, দহগ্রাম: একটি মাত্র উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার্থী ছয় শতাধিক।
ভারতের সীমানার মধ্যে থাকা বাংলাদেশ অংশে দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্র এটি, লালমনিরহাটে তিন বিঘা করিডোর পেরিয়ে আঙ্গরপোতা সিট মহলে যার অবস্থান।
সরেজমিনে তিন বিঘা করিডোর অতিক্রম করে পাকা সড়ক ধরে কিছু দূর এগুলে বঙ্গোরবাড়ি বাজার। বিদ্যালয়টির অবস্থান দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের কাছে।
প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের কাজে ঢাকায় যাওয়ায় কথা হয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তবিবুর রহমানসহ আরও কয়েকজনের সাথে।
১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় ২০১৩ সালের ৬ অক্টোবর জাতীয়করণ করা হয় বলে জানান তারা। ১৯৯৩ সালে নিম্ন মাধ্যমিক থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়।
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে দুটি করে শাখাসহ দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৬৭০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে এই বিদ্যালয়ে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তবিবুর রহমান বলেন, ২৪টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র নয় জন।
শিক্ষকরা বলেন, আমরা শিক্ষক স্বল্পতায় ধুঁকছি। প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় আমাদের উপর বাড়তি চাপ পড়ে। আইসিটি শিক্ষক না থাকায় পার্ট টাইম একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শনি ও বুধবার মাল্টি মিডিয়ায় ক্লাস নেন তিনি। বাকি দিন বন্ধ থাকে মাল্টি মিডিয়া ক্লাসরুম।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক কম থাকায় ক্লাস ঠিকঠাক হয় না। আর দহগ্রামের বাইরের যে শিক্ষকরা রয়েছেন, তারা নিয়মিত নন।
নয় শিক্ষকের মধ্যে দহগ্রামের তিনজন এবং বাকি ছয় জন পাটগ্রাম উপজেলাসহ বাইরের। প্রধান শিক্ষকও থাকেন হাতিবান্ধার বড়খাতায়।
দ্বিতল একাডেমিক ভবনে অফিস কক্ষ ও মাল্টি মিডিয়া ক্লাসরুম বাদে বাকি চারটিতে ক্লাস চলে। ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস চলে টিনসেড কক্ষে। ওই কক্ষে গিয়ে দেখা গেল, এক বেঞ্চে ৫/৬ জন করে শিক্ষার্থী বসে ক্লাস করছে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকসহ ব্যবস্থাপনার শিক্ষক মাহবুবুর রহমান ও ইসলাম ধর্মের শিক্ষক কামারুজ্জামান বলেন, আসবাবপত্রের সমস্যা প্রকট, প্রয়োজনীয় রুম নাই।
টিনসেডের একটি রুম ছাত্রীদের কমনরুম হিসেবে ব্যবহার হলেও সেটি ভাঙা আসবাবপত্রে ঠাসা। ফলে ছাত্রীরা ক্লাসের ফাঁকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। দুর্গন্ধে টেকা দায় টয়লেটের কাছে।
একাধিক ছাত্রী বাংলানিউজকে বলে, নামেই সরকারি বিদ্যালয়। আমাদের ক্লাসরুম, কমনরুম এবং টয়লেটের সমস্যা আছে। শিক্ষক সংকটের কারণে ঠিকমত ক্লাসও হয় না।
শিক্ষার্থীরা দ্রুত প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানালেও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, এর প্রক্রিয়া চলছে।
বিদ্যালয়টিতে একজন অফিস সহকারী রয়েছেন। আর চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী রয়েছেন তিন জন।
২২ দশমিক ৬৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২০ হাজার মানুষের এই সিট মহলটির তিন বিঘা করিডোর এক সময় বন্ধ ছিল। পর্যায়ক্রমে সময় বাড়িয়ে তা খুলে দেওয়া হয় ২৪ ঘণ্টার জন্য।
সর্বশেষ ২০১০ সালে তিন বিঘা করিডোর সার্বক্ষণিক খুলে দেয়া হলে নিজ দেশ বাংলাদেশে অবাধে প্রবেশের সুযোগ পায় দহগ্রামবাসী।
ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যানুযায়ী, দহগ্রামে শিক্ষিত লোকের হার ৪০ শতাংশ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছয়টি ও দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে একটি। আর একটি করে এবতেদায়ি ও ফোরকানিয়া মাদ্রাসা রয়েছে।
** এখানে হাসপাতালই অসুস্থ!
** দিনে দু’বার সীমান্ত পাড়ি ....
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
ইউএম/এমআইএইচ/জেডএম