ঢাকা: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ‘ন্যায্য’ দাবিগুলো পূরণে আবারও লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তা করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। দাবি পূরণে ‘দীর্ঘসূত্রতায়’ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মসূচিতে যাবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের একমাস অতিবাহিত হলেও শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না আসেনি বলে দাবি শিক্ষকদের। তাই সরকারের সঙ্গে একটি বৈঠকের পরই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের মতো কর্মসূচিতে যাবেন বলে তার সরাসরি জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও কয়েকটি বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা এবং শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
বেতন ও মর্যাদার প্রশ্নে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আটমাসের আন্দোলনের মধ্যে সর্বশেষ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আগামী ৬ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন বলে জানান বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন নেতারা।
৬ মার্চ বেতন-বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত পুর্নগঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা রয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।
‘ওই সভায় দাবি পূরণে পজেটিভ হলে অল রাইট, না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে হবে’- বলেন ফেডারেশনের সহ সভাপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, তৃণমূলের শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতিও সংক্ষুব্ধ- কেন বার বার সময় দেওয়া হচ্ছে- সে কারণে।
ফেডারেশনের মহাসচিব বলেন, ৬ মার্চ পুর্নগঠিত মন্ত্রিসভা কমিটির চূড়ান্ত সভায় শিক্ষক প্রতিনিধিরাও থাকবেন, দাবি বাস্তবায়ন না হলে ৮ মার্চ ফেডারেশনের সাধারণ সভায় শিক্ষকদের মতামত নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
শিক্ষকরা চাইলে কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের নেতা মাকসুদ কামাল।
তবে এবার ‘সফট’ কোনো কর্মসূচি শিক্ষকরা আর মানবেন না বলে জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনন্দ কুমার।
‘শিক্ষকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে ফেডারেশনকে বাধ্য করবে’- বলেন তিনি।
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, দাবি আদায়ে শিক্ষকরা অবিচল। তারা ক্ষুব্ধ, বিব্রতকর অবস্থায় আছেন। এখানকার শিক্ষকরা শুধু কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় বসে আছেন।
‘৬ মার্চের বৈঠকে পজেটিভ কিছু না এলে ৮ মার্চের সভায় আগের অবস্থানে যেতে বাধ্য হবেন শিক্ষকরা। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করতে বাধ্য হবেন’।
গত আট মাস ধরে নানা কর্মসূচি পালনের ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালন শুরু করেন ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ১৮ জানুয়ারি গণভবনে পিঠা উৎসবে ডেকে শিক্ষক ফেডারেশনের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরদিন ১৯ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি স্থগিত করেন শিক্ষকরা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈকের একমাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ফেডারেশনের নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলন চলছে। আন্দোলন দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে গেছে। আর ছোট আন্দোলনে যাওয়ার সুযোগ নেই।
তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দাবি পূরণের বিষয়ে কিছু ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান বাংলানিউজকে বলেন, মর্যাদার প্রশ্নে শিক্ষকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। শিক্ষকদের এবার মানানো কঠিন হয়ে যাবে।
‘তবে এখনও আমরা প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবেন’- বলেন তিনি।
আন্দোলনের স্ট্রাটেজি নিয়ে ‘কনফিউশন’ দেখছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এই নেতা।
তিনি বলেন, শোনা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্বদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষকদের আলাদা সম্মান দেবে সরকার। এটা হলে আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় মিলে আন্দোলন গড়ে তুলবো।
অষ্টম বেতন কাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করায় শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেলে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি অধ্যাপকদের পদ ‘অবনমন’ হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
আগের সপ্তম বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৩ এ উন্নীত হওয়াসহ যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসতেন তা বহাল রাখা, গ্রেড-১ থেকে কিছু সংখ্যক শিক্ষককে সিনিয়র সচিবের পদমর্যাদা (সুপার গ্রেড) দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছিলেন।
অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, দাবিগুলো শিক্ষকদের মান-সম্মানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সম্মান রক্ষায় দাবির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
অন্যান্য দাবির মধ্যে কিছু সংখ্যক শিক্ষককে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে ‘বিশিষ্ট অধ্যাপক’ করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়। তরুণ শিক্ষকদের উচ্চতর শিক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধু বৃত্তি চালু ও গবেষণার ব্যবস্থা করার দাবি ছিল শিক্ষকদের।
শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট মহলকে সময় দিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধানের প্রত্যাশায় রয়েছি। শিক্ষকতার মান আরও উন্নত করার জন্য আমরা বিভিন্ন পর্যায়ে পদায়নের ক্ষেত্রে গবেষণা প্রবন্ধের সংখ্যা বৃদ্ধির মতো যৌক্তিক বিষয়ও মেনে নিতে প্রস্তুত।
‘প্রয়োজনে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পদায়নের ক্ষেত্রে সমন্বিত ও একক নীতিমালা গ্রহণ করতেও ফেডারেশনের আপত্তি নেই। ’
‘আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের পর দাবি আদায়ের জন্য আর কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব ও আশ্বাসের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে’
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর
** ফের ‘কঠোর কর্মসূচিতে’ যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা
** একজন করে অধ্যাপককে সুপার গ্রেড
** বুধবার থেকে ক্লাস, কূট-কৌশল মেনে নেবেন না শিক্ষকরা
** বুধবার ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষকরা
** শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত
** ক্লাসে ফেরার বিষয়ে বৈঠকে বসেছেন শিক্ষকরা
** শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
** বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মসূচি স্থগিতের মেয়াদ বাড়লো