ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

নর্থ-সাউথের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা: ইউজিসি চেয়ারম্যান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
নর্থ-সাউথের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা: ইউজিসি চেয়ারম্যান

ঢাকা: শিক্ষক-ছাত্রের জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা বেসরকারি নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় জঙ্গিবাদসহ নানা অনিয়মের অভিযোগের জবাব দায়সারা ভাবে জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
 
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জঙ্গি সম্পৃক্ততা নিয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণায় কর্মসূচি ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।


 
গুলশানের হামলায় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রের নাম আসায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সোমবার (০১ আগস্ট) জঙ্গিবিরোধী মানববন্ধনের ঘোষণা দেয় ইউজিসি।  
 
রোববার (৩১ জুলাই) ইউজিসি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান এ ঘোষণা দেন।
 
নর্থ-সাউথের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি-না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই নেবো’।  
 
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি তৎপরতা মনিটরিংয়ের জন্য তিন সসদ্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলেও জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান।
 
তিনি বলেন, ‘দরকার হলে কমিটির সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করা হবে। নর্থ-সাউথের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। শুধু নর্থ-সাউথ না, যেকোনো নর্থ হোক আর সাউথ হোক, বেসরকারি হোক আর সরকারি হোক জঙ্গিবাদ ইজ জঙ্গিবাদ, জঙ্গিবাদ যেখানে থাকুক সরকার এবং দেশের জনগণের জন্য ক্ষতিকর। আমরা চাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিবাদের চর্চা হোক’।
 
১৯৭৬ সালে প্রণীত ইউজিসি আইনে জঙ্গিবাদ বিষয়ে তদারকি করার দায়িত্ব কমিশনের সেভাবে ছিল না বলেও জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান।
 
ইউজিসি’র পরিদর্শন দল এর আগে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেখানকার লাইব্রেরিতে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরিরের বই পেয়েছিল বলে জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির আর্থিক, একাডেমিক ও প্রশাসনিক অনিয়মসহ অনেক বিষয় প্রতিবেদনে উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল।
 
ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ডিসেম্বর মাসে এক মাসের মধ্যে সেগুলোর জবাব দিতে বলেছিল। এক মাসের সময় জানুয়ারিতে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু তারা (নর্থ-সাউথ) জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি’।
 
‘গুলশানের ঘটনা না ঘটলে, তাদের নাম প্রকাশ না পেলে হয়তো তারা এটা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করতো না। গত ১৪ জুলাই তারা সরকারকে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অনেকটা দায়সারা গোছের প্রতিবেদন। প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি ১৭ জুলাই আমাদের অবহিত করেছে’।
 
জঙ্গিবাদসহ অনিয়মের আগের ঘটনার ফলোআপ হিসেবে চলতি মাসে ইউজিসির তদন্ত কমিটি গিয়েছিল জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, তাদের কাছে কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তারা তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেনি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়ার জন্য এক মাস সময় চেয়েছে।
 
জঙ্গিবাদ নিয়ে ওই কমিটি অবশ্যই প্রশ্ন করেছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘নর্থ-সাউথের ভিসি ঠিক বলেননি। তার ডিফেন্সে তিনি বলতেই পারেন’।
 
ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের ভাঙার বিষয়ে বলেন, এ ব্যাপারে কোনো ম্যান্ডেড ইউজিসির নাই। এটা কেবল সরকার ভাঙতে পারে।
 
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কোনো কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান।
 
তিনি বলেন, ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে না। আইনের ব্যত্যয় ঘটলে অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া ইউজিসি’র কর্তব্য। কোনো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত থাকলে তাদের বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের নয়’।
 
গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৩ জন জঙ্গি আছে। তার মধ্যে সরকারি চারটিতে ১৮ জন এবং বেসরকারি ৫টিতে ১৫ জন।
 
হিজবুত তাহরিরের প্রধান দুই ব্যক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বলেও জানান চেয়ারম্যান।
 
পর্যবেক্ষক নিয়োগ
কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির স্বচ্ছতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলেও জানান ইউজিসি চেয়ারম্যান।
 
তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদের তথ্য বের করার মেকানিজম নেই। কোনো সেল বা বিশেষায়িত বিশেষজ্ঞ ইউজিসিতে নেই। আইনে এটা আমাদের কাজও না। ইউজিসি আইন ঢেলে সাজানোর জন্য বহুদিন ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে’।
 
‘এখন যেহেতু জঙ্গিবাদ একটা সমস্যা, এটি নিয়ে আর লকোচুরির ব্যাপার নাই। আর্থিক ও একাডেমিক বিষয়ের পাশাপাশি এ ধরনের (জঙ্গিবাদ) বিষয়ের জন্য একটি সেল গঠন করতে পারি- সেটা চিন্তা করতে হবে’।
 
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পরিবর্তনের জন্য কমিটি করেছে। কমিটিতে ইউজিসি চেয়ারম্যানও রয়েছেন’।
 
‘আমরা কিছু সুপারিশ করেছি। তার মধ্যে একটা সুপারিশ হলো, বাংলাদেশ ব্যাংক আইন অনুযায়ী অন্য ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদে যে রকম একজন পর্যবেক্ষক দিতে পারে। তিনি বোর্ডের সভায় বসবেন, সভা শেষে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবেন এবং সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নেবে। আমরা অনুরূপ একটি ব্যবস্থা নিচ্ছি। আইন সংশোধন যখন হবে, তাতে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি’।
 
ইউজিসি’র সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউসুফ আলী মোল্লা, ড. মো. আখতার হোসেন, ড. দিল আফরোজা বেগম, ড. এম. শাহ নওয়াজ আলি এবং ইউজিসি’র সচিব ড. মো. খালেদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।