ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

রাবি শিক্ষক জলি’র স্মরণে অঝোরে কাঁদলেন সবাই

রাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬
রাবি শিক্ষক জলি’র স্মরণে অঝোরে কাঁদলেন সবাই বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাবি: ‘মঞ্চের এক পাশে বড় ফ্রেমে রঙিন ছবিতে হাস্যোজ্জ্বল অবয়ব। পাশেই মঞ্চের ব্যানারে সাদা-কালো ক্যানভাসে বন্দি একই ছবি।

একই মানুষের বিপরীত এই আলোকচিত্র যেন তার জীবনেরই চরম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

কিছুদিন আগেই ছিলেন জীবিত, প্রাণবন্ত মানুষ। সবার প্রিয় এই মানুষের অকাল মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। তার স্মরণে তাই অঝোরে কাঁদলেন সবাই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহান জলির স্মরণে আয়োজিত শোক সভায় এ দৃশ্য দেখা যায়।

বিভাগের ১২৩ নম্বর কক্ষে এ শোক সভার আয়োজন করা হয়। শোক সভায় কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছিলেন না বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিহুর রহমান। ডায়াসের সামনে শুধু অঝোরে কাঁদছিলেন। কিছুক্ষণ পর নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে স্মরণ করলেন সবার প্রিয় আকতার জাহানকে। তার স্মৃতিচারণ করলেন অশ্রুসজল নয়নে।

সভায় আকতার জাহানের বড় বোন ইসরাত জাহান বলেন, ‘আমরা পিঠাপিঠি দুই বোন এক সঙ্গে বড় হয়েছি। আমি দেশের বাইরে ছিলাম। যাওয়ার আগে সোয়াদকে (আকতার জাহানের ছেলে) নিয়ে আলোচনা হয়েছে, গণিতে সে একটু দুর্বল ছিল, কীভাবে সে ভালো করবে। যার বাচ্চাকে নিয়ে এত উদ্বিগ্নতা, সে এ ধরনের একটা...। ’ তিনি আর কিছু বলতে পারেননি।

শোক সভায় সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ্ আজম বলেন, ‘আমরা কেন আকতার জাহানের অভিমান বুঝতে পারিনি, এটা আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। এ মৃত্যুতে যদি কোনো প্ররোচণাকারী থাকে তার বিচার চাই। তিনি শুধু আকতার জাহানকে হত্যা করেননি, তার স্বপ্নকেও হত্যা করেছেন। ’

তিনি জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হবে, শিক্ষকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কেন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি? এছাড়া তারাও সহকর্মীর স্মরণে একটি শোক সভার আয়োজন করবেন বলে জানান।

বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের শিক্ষার্থী জোবায়দা শিরিন জ্যোতি বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীরা নিজের খরচ চালাতে পারতো না, ম্যাম তার বেতনের একটা অংশ ওই শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় ব্যয় করতেন। ম্যাম কখনোও মচকাননি, তাকে ভেঙে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।

রোববার দুপুরে আয়োজিত এ শোক সভায় বিভাগের শিক্ষক শাতিল সিরাজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়া, মহিলা পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাধুরী রায় চৌধুরী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, হোসাইন মিঠু, অধরা মাধুরী পরমা।
এর আগে বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুল ‘আকতার জাহানের সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য ‘শিরোনামে জলি’র জীবনী পাঠ করেন। সভা চলাকালে আকতার জাহানকে নিয়ে একটি স্লাইডশো প্রদর্শন করা হয়। সভায় বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সাড়ে ১১টায় বিভাগের সামনে থেকে একটি শোকযাত্রা বের করা হয়। সেটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে ফিরে আসে। এসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কালোব্যাজ ধারণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।