ঢাকা: উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তি। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার আগেই বাছাই প্রক্রিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা নিতে ইচ্ছুক মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন ভঙ্গ করছে বুয়েট।
ভাল ফল নিয়ে বুয়েটে আবেদনের পর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী বাছাই করায় সামান্য নম্বরের জন্য ‘ছাঁটাই’ হওয়ায় হতাশ জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
বাছাই প্রক্রিয়ায় ছেঁটে না ফেলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করার উপর জোর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এতে মেধার সঠিক মূল্যায়ন হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
তবে এ বিষয়ে আশার কথা জানাতে পারেনি প্রকৌশল শিক্ষার সব থেকে বড় প্রতিষ্ঠান বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
সূচি অনুযায়ী, ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের জন্য আগামী ২২ অক্টোবর বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে আবেদনকারীদের মধ্য থেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে বুয়েট।
ভর্তির বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, এ বছর বুয়েটে এক হাজার ৩০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে।
আবেদনের জন্য প্রার্থীর যোগ্যতা ধরা হয় এসএসসিতে জিপিএ-৪ এবং এইচএসসিতে গণিত, পদার্থ, রসায়ন, বাংলা ও ইংরেজিতে মোট জিপিএ’র ২৪ পয়েন্ট।
আর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে বাছাইয়ের জন্য যথাক্রমে আবেদনকারীর এইচএসসি পরীক্ষায় গণিত, পদার্থ ও রসায়ন বিষয়ে প্রাপ্ত মোট নম্বর এবং গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানে প্রাপ্ত নম্বরকে অগ্রাধিকারের ক্রম বিবেচনা করা হয়। এ বিবেচনায় নয় হাজার শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার উল্লেখ ছিল ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে।
সে অনুযায়ী এবার নয় হাজার ১৫৭ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে তালিকায় রাখা হয়েছে বলে জানায় বুয়েট রেজিস্ট্রার দপ্তর।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের তালিকা থেকে বাদ পড়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা ঠিক করে দেওয়া হলেও বাছাইয়ে হাজার শিক্ষার্থী বাদ দেওয়া অমানবিক। কোনো কারণে একজন শিক্ষার্থী এইচএসসিতে কোনো বিষয়ে খারাপ ফল করতে পারে। তবে ভাল প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিলে চান্স পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারতো।
প্রার্থীদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসমূহ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে ৬০০ টাকা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগসমূহ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং স্থাপত্য বিভাগের জন্য ৭০০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, নয় হাজারের মধ্যে ঢাকা বোর্ডের প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ঢাকা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় এ বোর্ডের শিক্ষার্থীরা ভাল ফল করতে পারায় তারা সুযোগ পায় বলে তাদের অভিযোগ।
একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তাহলে অন্য বোর্ডের শিক্ষার্থীরা কি অপরাধ করল? যারা ভাল ফল করেও ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না তাদের কি মানসিক যন্ত্রণা আরো বাড়লো না?
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগে এমন বাছাই প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে বৈষম্য দূর করার দাবি জানান বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ভর্তি পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আবু হাসান ভূঁইয়ার মোবাইল ও টেলিফোন নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বুয়েটের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এন.এম. গোলাম জাকারিয়া বাংলানিউজকে বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে প্রার্থী বাছাই করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। গত শিক্ষাবর্ষেও এ পদ্ধতি ছিল।
তিনি বলেন, এবার আসন না বাড়লেও গত বছরের থেকে পাঁচশ’ জন বেশি শিক্ষার্থীকে বাছাই তালিকায় রাখা হয়েছে। আগামীতে হয়তো আরও বাড়বে।
তবে পদ্ধতির আমূল পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এককভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৬
এমআইএইচ/আরএ