ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

জাবিতে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এডহকে নিয়োগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৬
জাবিতে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এডহকে নিয়োগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন শিক্ষকের স্ত্রী এবং উপ-উপাচার্যের আত্মীয়কে বিভিন্ন পদে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। উক্ত চারটি নিয়োগ স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দেওয়ার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকদের একাংশ।

এ পরিস্থিতিতে পূর্বের পাঁচটি এবং এই চারটি এডহক নিয়োগের প্রতিবাদে আন্দোলনে নামতে পারেন শিক্ষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলা বিভাগের সভাপতি ও শহীদ রফিক জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এস এম আবু দায়েনের স্ত্রী আফরোজা রেশমাকে প্রশাসনিক ভবনের শিক্ষা শাখায় প্রশাসনিক অফিসার পদে, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সিন্ডিকেট সদস্য এবং মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ নাজমুল হাসান তালুকদারের স্ত্রী নুজহাত নুয়েরীকে স্কুল ও কলেজের কলেজ শাখায় বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা আকতারকে লাইব্রেরির প্রশাসনিক অফিসার পদে এবং রিফাত জেরিনকে ছাত্র কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রে প্রশাসনিক অফিসার পদে এডহকে নিয়োগ দিয়েছেন উপাচার্য। রিফাত জেরিন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেনের আত্মীয় বলে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি প্রয়োজনের এডহকে নিয়োগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এডহকে নিয়োগ দিলেও এখন পর্যন্ত নিয়োগপ্রাপ্তদের অফিসে বসার জন্য কোন চেয়ার-টেবিল কিংবা ডেস্ক দিতে পারেনি। ফলে তারা আশপাশের ডেস্কে বসে সময় পার করছেন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোপূর্বে স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনায় পাঁচজন স্টাফকে এডহকে নিয়োগ দিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। সে সময় প্রতিবাদ না করায় আবার চারজনকে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ দিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অনিয়ম বন্ধের জন্য প্রশাসনের বাহিরে থাকা শিক্ষকদের বিভিন্ন গ্রুপ একত্রিত হয়ে একটি ফোরাম গঠন করেছেন। তারা এই অনিয়মগুলোর প্রতিবাদ করবেন। শুধু স্টাফ নিয়োগে নয়, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মেরও প্রতিবাদ জানাবেন এই ফোরামটি।

শিক্ষকদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোন ধরণের জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হয়নি যে এডহকে নিয়োগ দিতে হবে। প্রশাসন চাইলেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ দিতে পারতো। কিন্তু তা না করে নিজেদের কিছু শিক্ষকের মন রক্ষা করার জন্য স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে এডহকে নিয়োগ দেওয়া হলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী শিক্ষকদের ফোরাম ‘শিক্ষক মঞ্চ’র মুখপাত্র ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ওপেন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্টাফ নিয়োগ দেওয়া উচিত ছিল। এডহকে নিয়োগ দেওয়ায় স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। আমরা ওপেন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

সম্মিলিত শিক্ষক পরিষদের আহ্বায়ক এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের চেয়ে স্টাফ নিয়োগ আরো বেশি পলিটিক্যাল। আমরা এর আগেও এটা লক্ষ করেছি এবং প্রতিবাদ করেছি। এখন যে নেই তা নয়। এখনো হচ্ছে। আমরা এগুলোর প্রতিবাদ জানানোর জন্যই একত্রিত হয়েছি।

তিনি বলেন, এডহক নিয়োগ কোন অবস্থাতেই বৈধ নিয়োগ নয়। এডহক ছাড়াও বিজ্ঞাপন দিয়েও যে নিয়োগ হয় সেগুলোতেও স্বজনপ্রীতি হয়। এমনকি অর্থ লেনদেনও ঘটে। এডহক নিয়োগকে আসলে স্বজনপ্রীতি বললে ভালো শোনায়। এটাকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি বলা যেতে পারে। কাকে কি সুবিধা দিয়ে নিজেদের ক্ষমতাকে সুদৃঢ় করা যায় সেটাই মুখ্য বিষয়। স্বজন তারাই যারা ক্ষমতা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়। সুতরাং তাদের স্বার্থে যা করা প্রয়োজন সেটা তারা করেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। পরে তার মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

পরে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বলেন, জরুরি প্রয়োজন ছিল বলেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্বজনপ্রীতির বিষয়ে তিনি মোবাইল ফোনে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, প্রশাসন যেহেতু নিয়োগ দিয়েছে, নিশ্চয় প্রয়োজন দেখেই দিয়েছে। স্বজনপ্রীতির বিষয়ে আমার কোন কিছু জানা নেই। এ বিষয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৬
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।