রাবি: বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী নীহার বানুর হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু ১৯৭৬ সালে। এখনো চলছে।
সর্বশেষ গত ২০ অক্টোবর সকালে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলের ২৫৩ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র ছিল সে। তার মাথার পেছনে, হাত-পায়ে আঘাতে চিহ্ন রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। সুরতহাল পর্যবেক্ষণ শেষে প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা এটি হত্যাকাণ্ড।
২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় ছাত্রলীগ নেতা রুস্তম আলী। ঘটনার আড়াই বছর পার হলেও হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। আদালতে চার্জশিট না দেওয়ায় শুরু হয়নি বিচার প্রক্রিয়া।
চলতি বছরের এপ্রিলে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাড়ির একটু দূরে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী। পুলিশ দাবি করে-হত্যাকাণ্ডে জেএমবি জড়িত। তবে ছয় মাস পার হলেও এখনো চার্জশিট জমা দিতে পারেনি তদন্ত কর্মকর্তা।
২০১২ সালের ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল হাসান সোহেল। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শাহ মখদুম হলে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনের হাত-পায়ের রগ কেটে
নৃশংসভাবে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা। পরে তার লাশ হলের পেছনে ম্যানহোলে ফেলে রাখে ঘাতকরা। ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছাত্রলীগ কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে ছাদ থেকে ফেলে দেয় দলীয় নেতাকর্মীরা। পরে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এসব কোনো হত্যাকাণ্ডের বিচার শেষ হয়নি।
মূলত আশির দশকে ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের উত্থানে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বাড়তে থাকে। শুরু হয় অস্ত্রের ঝনঝনানি। শিবিরের হামলায় প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী নিহত হয়।
নব্বই দশকেও ছাত্রসংগঠনগুলোর সংঘর্ষে নিহত হয় ১৪ জন শিক্ষার্থী। এসব হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হয়নি। শাস্তি হয়নি হত্যায় জড়িতদের।
২০১৪ সালে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর শফিউল ইসলাম লিলনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে হত্যা করা হয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ ইউনুসকে। এসব হত্যাকাণ্ডের কোনটিরই বিচার শেষ হয়ে দণ্ড কার্যকর হয়নি।
রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর মূলত রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে বেশি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনার পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিচার চেয়ে আন্দোলন করে
থাকে। তবে পুলিশ প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকার অভাবে বিচার প্রক্রিয়া থমকে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
আরআই