ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮৮ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
সাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮৮ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত

ঢাকা: রাজধানীর নামকরা ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮৮ জন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে সম্পৃক্ত বলে প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বরখাস্তসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে কমিশনে সুপারিশ করেছেন দুদকের অনুসন্ধান টিম।

সরকার কোচিং বাণিজ্য বন্ধে ২০১২ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করে। ওই নীতিমালায় একজন শিক্ষককে তার প্রতিষ্ঠানের বাইরে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের ১০ জন শিক্ষার্থীকে পড়ানোর সুযোগ রাখা হয়।

এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে শুধুমাত্র অভিভাবকদের আবেদনে প্রতিষ্ঠান প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ে মেট্রোপলিটন শহরে মাসিক ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০ টাকা এবং উপজেলা বা স্থানীয় পর্যায়ে ১৫০ টাকা করে রসিদের মাধ্যমে ফি নিয়ে ক্লাস নেওয়া যাবে। তবে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিজ বিবেচনায় এ ফি’র হার কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন।  

নীতিমালায় আরও বলা হয়, একটি বিষয়ে মাসে সর্বনিম্ন ১২টি ক্লাস হতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে প্রতিটি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ফি’র এ টাকা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়ন্ত্রণে আলাদা তহবিলে জমা থাকবে। প্রতিষ্ঠানের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সহায়ক কর্মচারীর ব্যয় বাবদ ১০ শতাংশ টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা অতিরিক্ত ক্লাসে নিয়োজিত শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

দুদকের নির্ভরশীল সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, কিন্তু সেই নীতিমালার তোয়াক্কা করেননি কোনো শিক্ষক। বরং কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। তাই গত এপ্রিল মাসে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।   দীর্ঘ চারমাসের অনুসন্ধান শেষে ১ম ধাপে রাজধানীর ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৮৮ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে দুদকের অনুসন্ধান কমিটি।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, কোচিং বাণিজ্যে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৩৪ জন, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৪ জন, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১২ জন, ভিকারুন নিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৬ জন,মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ জন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ জন ও ধানমন্ডি গর্ভনমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের ৭ জন শিক্ষক জড়িত।

দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা প্রকৃত জ্ঞান ‍অর্জন করতে পারছে না। অন্যদিকে শিক্ষকরা আর্থিক লাভের আশায় শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করছেন। শিক্ষার্থীরা যেন প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারে, সেজন্য আমরা কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করি। দুদকের সে অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে কিছু শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে, যারা ওতপ্রোতভাবে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত’।

‘দুদকের অনুসন্ধান টিম তাদের প্রতিবেদনে এসব কোচিংবাজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করেছেন। আমাদের এ অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে ও দেশব্যাপী চলবে’।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষকরাই পারেন একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। তবে কিছু শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। আমরা চাই, তাদের শাস্তি দিতে, কিন্তু পারছি না’।

‘দুদক কোচিংবাজ শিক্ষকদের ধরতে যে কাজ করছে, সেজন্য দুদককে ধন্যবাদ জানাই। কেননা, দুদক তথ্য দিলে আমরা দ্রুতই সেসব কোচিংবাজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমরা কখনো দুর্নীতিকে সমর্থন করিনি, আর করবোও না’।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
এসজে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।