স্বাধীন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের উত্তর টেপাপলাশী গ্রামের দিনমজুর জহির আলীর ছেলে।
স্বাধীনের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গ কথা বলে জানা যায়, বসতভিটা ছাড়া আবাদি কোনো জমি নেই দিনমজুর জহির আলীর।
স্বাধীন নিজেকে একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নপূরণে প্রধান অন্তরায় অর্থ। প্রতিনিয়ত অর্থের কাছে বাধাগ্রস্ত হয়েছে তার লালিত স্বপ্ন। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় অর্থাভাবে বন্ধ হতে যাওয়া লেখাপড়া সচল করতে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে চড়া সুদে ঋণ তুলে দেন মা ছামিনা বেগম। সেই টাকায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে নামুড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ-৪ অর্জন করেন স্বাধীন। এরই মাঝে বাবা-ছেলের দিনমজুরি আয়ে সাপ্তাহিক কিস্তির মাধ্যমে তা পরিশোধ করেন। একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষার সময় ঋণ নিয়ে নামুড়ি মহাবিদ্যালয় থেকে অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.৮৩ অর্জন করলেও সেই ঋণে টাকা এখনো পরিশোধ হয়নি তাদের।
বাবা-ছেলের দিনমজুরি আয়ে স্বাধীন বাবুর পাশাপাশি আরও দুই ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ চলে। স্বাধীনের ছোট বোন জোহরা খাতুন অষ্টম শ্রেণি, আর ভাই শাকিল হোসেন পড়ছে চতুর্থ শ্রেণিতে। তাদের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে যা থাকে তা দিয়েই কোনোরকমে চলে তাদের পাঁচ সদস্যের সংসার।
স্বাধীন তার স্বপ্নপূরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৫৭১তম স্থান অর্জন করেন। আগের ঋণ পরিশোধ না হওয়ায় নতুন করে ঋণ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করা আকাশ ভেঙে পড়ে তার মাথায়। স্বপ্নপূরণের সংগ্রাম মাঝপথে এসে মাত্র ২৫ হাজার টাকার জন্য পরাজিত হতে বসেছে। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে কে দিবে এতো টাকা? কে তাকে ভর্তি করাবে দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে? নয় তো মাঝপথেই থেমে যাবে তার জীবন সংগ্রাম। ভেঙে যাবে লালিত স্বপ্ন।
স্বাধীন বাবু বাংলানিউজকে বলেন, জীবন মানে সংগ্রাম। দারিদ্র্যের সঙ্গে নিত্যদিন সংগ্রাম করে মাঝপথে এসেছি। এখানে থেমে যেতে চাই না। চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদী যদি ভারতে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন, আমি দিনমজুরি করে কেনো অর্থনীতিবিদ হতে পারবো না? সাহায্য না দিলেও ঢাবিতে ভর্তি হতে সহজ শর্তে ২৫ হাজার টাকা ঋণ চান স্বাধীন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে ০১৭৪০০২৪০৭৮ নম্বরে।
স্বাধীনের বাবা জহির আলী বাংলানিউজকে জানান, দিনমজুরি কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে স্বাধীনের লেখাপড়ার খরচ যোগান দেন। ফরম পূরণ বা বড় ধরনের খরচের সময় ঋণ করেন এবং তা কিস্তিতে পরিশোধ করেন। আগের ঋণ অপরিশোধিত থাকায় নতুন করে ঋণ পাচ্ছেন না তিনি। ফলে স্বাধীনকে ঢাবিতে ভর্তি করাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
ছেলের স্বপ্নপূরণে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের আহ্বান জানান তিনি।
নামুড়ি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এইচএম শরিফ মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, দরিদ্র পরিবারের মেধাবী ছাত্র হিসেবে স্বাধীনকে বেশ আর্থিক সহযোগিতা করা হতো। আর্থিক সহযোগিতা পেলে সে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে।
এজন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৮
জিপি