ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শুরু হচ্ছে ঢাবির ভর্তিযুদ্ধ, উচ্ছ্বাস-উদ্বেগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
শুরু হচ্ছে ঢাবির ভর্তিযুদ্ধ, উচ্ছ্বাস-উদ্বেগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কার্জন হল ও লোগো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রতিটি শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন জাগে এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়ে নামি এবং বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে। বিপুল সংখ্যক ভর্তিচ্ছুর বিপরীতে আসন সংখ্যা কম থাকায় ভর্তি পরীক্ষায় অনেকেরই সেই স্বপ্ন বা ইচ্ছা পূর্ণতা পায় না। তীব্র প্রতিযোগিতামূলক এই পরীক্ষাকে অনেকেই তাই ‘ভর্তিযুদ্ধ’ অ্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) হওয়ায় এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি মানবণ্টনে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসলেও এবার যুক্ত হয়েছে নতুন নিয়ম। ফলে ভর্তিচ্ছু হাজারও শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন উচ্ছ্বাস কাজ করছে, আবার নতুন নিয়মে কেমন হবে পরীক্ষা, এর জন্য উদ্বেগও কাজ করছে।

এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা বিজনেস স্টাডিজ অনুষদভুক্ত ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হবে। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ৫৬টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে এ পরীক্ষা।

এ বছর ‘গ’ ইউনিটে ১২৫০টি আসনের জন্য ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ২৯ হাজার ৫৮জন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সমান সংখ্যক আসনের বিপরীতে ২৭ হাজার ৫৩৪ জন আবেদন করেছিলেন। প্রতি আসনে লড়েন ২২ জন। এবার প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বেন ২৩ জন ভর্তিচ্ছু।

এ দিন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। ভর্তি পরীক্ষার সিট-প্ল্যান বিশ্ববিদ্যালয়ের admission.eis.du.ac.bd ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।

বিজনেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। কিছু গোপনীয় কাজ বাকি। আমরা সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে কাজ করছি। প্রশ্নপত্র প্রণয়নও নিজস্ব প্রেসে করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

৭৫ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক ও ৪৫ নম্বরের লিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৯০ মিনিটের পরীক্ষা। নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার জন্য ৫০ মিনিট এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য সময় থাকবে ৪০ মিনিট।

প্রতিটি নৈর্ব্যক্তিকের জন্য ১.২৫ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর। লিখিত অংশে প্রশ্নের মান ২ থেকে ৫-এর মধ্যে হবে। পরীক্ষায় পাস করতে হলে প্রার্থীকে নৈর্ব্যক্তিক অংশে ৩০ এবং লিখিত অংশে ১২ নম্বরসহ মোট ৪৮ নম্বর পেতে হবে। বিষয়ভিত্তিকভাবেও পরীক্ষার্থীদের পাস করতে হবে।

মিরপুর বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ অলি বাংলানিউজকে বলেন, প্রস্তুতি ভালো নিয়েছি। তবে প্রথমবারের মতো লিখিত পরীক্ষা হবে, বিষয়টা নিয়ে আমাদের মাঝে একটু উদ্বেগ কাজ করছে। তারপরেও নির্দেশনা মোতাবেক পড়েছি। কিন্তু বিগত সালের প্রশ্ন না থাকায় আমরা ধারণা পাচ্ছি না।

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এমবিএ-এর ছাত্র ইসা হোসাইন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ক্লাস নিতে গিয়ে দেখেছি শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নিয়ে ভয় বেশি। কারণ আগের এমসিকিউ থেকে তারা যথেষ্ট ধারণা পেয়েছে। তবে লিখিত পরীক্ষায় বোর্ড বই থেকে প্রশ্ন আসবে। যারা একটু সচেতনভাবে অধ্যয়ন করেছে, তারা এ অংশ ভালোভাবে উত্তর করতে পারবে।

এদিকে, বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, জালিয়াতি করে বেশকিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার প্রমাণ মেলে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শতাধিক শিক্ষার্থীকে কয়েক দফায় বহিষ্কারও করে। যা নিয়ে অভিভাবক মহলে উদ্বেগ রয়েছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রামের হাবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, উচ্চশিক্ষায় ভর্তি জালিয়াতির খবর দেখে মর্মাহত হই। কারণ এর মাধ্যমে একজন সারাবছর প্রস্তুতি নিয়েও চান্স পায় না, অন্যজন প্রশ্ন পেয়ে পাস করে যায়।

তবে বরাবরের মতো এবারও পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন বা টেলিযোগাযোগ করা যায় এরূপ কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস/যন্ত্র সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা চলাকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভর্তি জালিয়াতদের বিষয়ে সবসময় সতর্ক ও সক্রিয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবীদের জায়গা। ভর্তি জালিয়াতদের প্রমাণ পেলেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে।

ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় ছাত্রলীগ:
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে নিজেদের উদ্যোগের কথা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে একটি কর্মসূচির কথা জানান শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। সংগঠনটির কর্মসূচির মধ্যে থাকছে- ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে পরীক্ষার আগের রাতে থাকার সুব্যবস্থা করবে হল ছাত্রলীগ। শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য জয় বাংলা বাইক সার্ভিস চলমান থাকবে। পরীক্ষা কেন্দ্র পরিচিতির জন্য দিক নির্দেশক চিহ্ন ও সার্বক্ষণিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। সুপেয় খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে। কলম ও আনুষঙ্গিক শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত অথচ পরীক্ষা কেন্দ্রে নেওয়ার অনুপযোগী জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা করা হবে। বিভিন্ন পয়েন্টে স্থায়ী তথ্যকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য হুইলচেয়ার ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সরবরাহ করা হবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আগত অভিভাবকদের বিশ্রামের জন্য চেয়ার, হাতপাখা ও খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে। হটলাইনের মাধ্যমে যে কোনো প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
এসকেবি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।