স্কুলের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুরে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের পাশেই সম্পূর্ণ আবাসিক এই স্কুলের অবস্থান। স্কুলের প্রবেশ ফটক পেরিয়ে একটু এগুলেই পাহাড়ের চূড়ায় ভবন চোখে পড়ে।
কোথাও একাডেমিক ভবন আবার কোথাও ছাত্রদের হোস্টেল। টিলা অবিকল রেখে গড়ে তোলা হয়েছে স্কুলের একাডেমিক ভবন, হোস্টেল ও ডরমিটারি। আবার স্কুল ক্যাম্পাসে টিলার ফাঁকে ফাঁকে চায়ের বাগান। প্রকৃতির এমন রূপ আর কোথাও দেখা যায় না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি শিক্ষা দেওয়া, লিডারশিপ বিল্ডাআপ ও দেশপ্রেম জাগ্রতবোধ করাই প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়তে সংগীত-শরীরচর্চাসহ নানা কো-কারিকুলাম অ্যাকটিভিটিস পরিচালনা করা হয়।
জানা গেছে, দেশের ১৪জন ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ী-শিক্ষাবিদ মিলে দেশের সবচেয়ে বড় এই আবাসিক স্কুলটি গড়ে তুলেছে।
স্কুলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদার। ২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে ইংরেজি মাধ্যমে সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলছে ওই স্কুলে।
বর্তমানে স্কুলটিতে ১২০ জন আবাসিক ছাত্র ও ২১ জন শিক্ষক রয়েছেন। প্রিন্সিপালসহ ৩ জন ভারতীয় শিক্ষক রয়েছেন। যদিও এখানে প্রায় ৯৫০ জন শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে। হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত খাবার, চিকিৎসা, সান্ধ্যকালীন কোচিং, বিনোদন ও খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুবিধা রয়েছে। বিশাল সবুজ এ ক্যাম্পাসে ৬ খেলার মাঠ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুলের শিক্ষকরা দক্ষতা সম্পন্ন। তাদের দক্ষতা বাড়াতে হাফিজ মজুমদার ট্রাস্টের রিসোর্স সেন্টারে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ স্কুলে মাসে সর্বসাকুল্যে ২০ হাজার টাকা দিতে হয় ছাত্র ভেদে। বছরে এককালীন সেশন ফি দিতে হয় ৬০ হাজার টাকা। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য এ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বরিশালের ছেলে অংকুর পাল, স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবার ছোট ছেলে। মা না থাকায় তাকে এই আবাসিক স্কুলে ভর্তি করেছেন বাবা জহর পাল।
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া অংকুর বাংলানিউজকে জানায়, এখানে পড়াশোনার পরিবেশ খুবই ভালো। যেকোনো সময় শিক্ষক চাইলে রুমে চলে আসেন। বুঝিয়ে দিয়ে যান পড়া। এটা খুবই ভালো দিক।
প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ব্রিজ কিশোর ভারদ্বাজ ভারতীয় খ্যাতিমান শিক্ষক। তিনি জাফলং ভ্যালি স্কুলকে নিয়ে জানালেন, তার স্বপ্নের কথা।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এ দেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশের আবাসিক স্কুলে যাচ্ছে। যাতে বিদেশে শিক্ষার্থীরা না যায়, এজন্য আন্তর্জাতিক মানের এ স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ছাত্রদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও লিডারশিপ তৈরি করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেহেতু ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয়, তাই ছাত্রদের ভাষা শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্রিন্সিপাল আরও বলেন, ভবিষ্যতে স্কুলের ক্যাম্পাসে অর্গানিক ফুড উৎপাদন করে চাহিদা মেটানো হবে। এছাড়া স্কুলকে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এটা হবে দেশের রোল মডেল।
স্কুলে ৩টি হোস্টেল, ৬টি খেলার মাঠ, ৬টি ক্লাব, ৪টি ল্যাব সুবিধা রয়েছে বলে যোগ করেন ব্রিজ কিশোর ভারদ্বাজ।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৯
টিএম/এএটি