ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবির ক ইউনিটের প্রশ্নে ভুল, ব্যবধান গড়বে লিখিত পরীক্ষা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
ঢাবির ক ইউনিটের প্রশ্নে ভুল, ব্যবধান গড়বে লিখিত পরীক্ষা কার্জনে পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীরা/ছবি: শাকিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: প্রথমবারের মতো এমসিকিউয়ের (নৈর্ব্যক্তিক) পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রথমবর্ষ সম্মান শ্রেণির ভর্তিপরীক্ষা। গত সপ্তাহে বিজনেস অনুষদের পরীক্ষার পর শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হলো বিজ্ঞান অনুষদের অধীন ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষা।  

পরীক্ষায় প্রশ্নের লিখিত অংশে একটি প্রশ্ন ভুল থাকার অভিযোগ উঠেছে। আর মেধা তালিকায় ব্যবধান গড়বে এই লিখিতপরীক্ষা।

পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।

প্রশ্ন সংগ্রহ করে দেখা যায়,  লিখিত পরীক্ষার ফিজিক্স অংশে প্রথম প্রশ্নে velocity 50ms-1.এটা ইংলিশ ট্রান্সলেশন পার্টে দেওয়া আছে। কিন্তু বাংলায় নেই। শুধু বলা আছে সমবেগে। বাংলায় পড়ে যারা উত্তর করার চেষ্টা করেছে তাদের অনেকে এ অংশের উত্তর করতে পারেনি। ফলে সহজ এ প্রশ্নের মান ৩ হলেও উত্তর করতে গিয়ে সময় নষ্ট হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, এই দায়ভার কে নেবে? ইংরেজি অনুবাদে আদিবেগ দেওয়া থাকলেও বাংলায় আদিবেগ দেওয়া নেই। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ভর্তিপরীক্ষার প্রশ্নে এমন ভুল হওয়া যৌক্তিক নয়। অনেকে বলবেন ইংরেজিতে তো ঠিক দেওয়া রয়েছে। কিন্তু এত অল্প সময়ে মধ্যে বাংলা ইংরেজি দু’টি প্রশ্ন দেখে উত্তর দেওয়ার সময় থাকে কিনা সেটাও ভেবে দেখা উচিত। জানি না প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থী শুধু প্রশ্নপত্রের এই ভুলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর থেকে বঞ্চিত হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি। আমাদের পরীক্ষা কমিটি বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।

৭৫ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক ও ৪৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নিয়মে ভর্তিপরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মোট ৯০ মিনিটের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় পরীক্ষার্থীদের। নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার জন্য ৫০ মিনিট ও লিখিত পরীক্ষার জন্য সময় ছিল ৪০ মিনিট। প্রতিটি নৈর্ব্যক্তিকের জন্য ১.২৫ নম্বর বরাদ্দ ছিল। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে ০.২৫ নম্বর। লিখিত অংশে ভর্তিপরীক্ষায় পাস করতে হলে প্রার্থীকে নৈর্ব্যক্তিক অংশে ৩০ ও লিখিত অংশে ১২ নম্বরসহ মোট ৪৮ নম্বর পেতে হবে। বিষয়ভিত্তিকভাবেও পরীক্ষার্থীদের পাস করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেধাতালিকায় অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে লিখিত পরীক্ষা। প্রথম নৈর্ব্যক্তিক অংশের উত্তর অধিকাংশ শিক্ষার্থী করতে পেরেছে। কিন্তু ৪৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় সময় কম থাকায় বাংলা ও ইংরেজি অংশের ভালো দখল না থাকলে এ অংশে দ্রুততম সময়ে উত্তর করা কঠিন। যে কারণে অনেক শিক্ষার্থীর পাস মার্ক ন্যূনতম ১২ নম্বর তুলতে সময় শেষ হয়ে যায়।

‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রী প্রত্যাশা রায় বাংলানিউজকে বলেন, প্রশ্ন সহজ ছিল। কিছু প্রশ্নের উত্তর বর্ণনামূলক হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে পারিনি। এটা আমার প্রথম ভর্তিপরীক্ষা। এজন্য টাইম ম্যানেজমেন্ট ভালো ছিল না। তারপরও আশাবাদী।

দিনাজপুর সরকারি কলেজের ছাত্র গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, লিখিত অংশে তত্ত্বীয় অংশটা কঠিন ছিল। যার কারণে প্রশ্ন বুঝতে সময় চলে যায়। এমসিকিউ প্রশ্ন ভালো হলেও লিখিত আমার ভালো হয়নি। মেধাতালিকায় অবস্থান দূরে থাকতে পারে।

চট্টগ্রামের হাজি মুহম্মদ মুহসীন সরকারি কলেজের রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার কাছে লিখিত প্রশ্ন সহজ মনে হয়েছে, কিন্তু সব প্রশ্নের উত্তর করা খুবই কঠিন।

২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের অধীনে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তিপরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে মোট ৮৬টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো আখতারুজ্জামান কার্জন হলে পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বলেন, নতুন  সংস্করণে লি‌খিত পরীক্ষা নি‌য়েই এবা‌রের পরীক্ষা অনু‌ষ্ঠিত হ‌চ্ছে । কোথাও থে‌কে অনাকা‌ঙ্ক্ষিত খবর পাই‌নি। আশা ক‌রি, সব কিছু সুষ্ঠু হ‌বে।  

পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গত রাত থেকে সতর্ক ছিলাম। সব ধরনের নিরাপত্তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা একযোগে কাজ করেছে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

'ক' ইউনিটের অধীন বিভাগগুলো হলো- পদার্থ, রসায়ন, গণিত, ফলিত গণিত, পরিসংখ্যান, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান, অণুজীব বিজ্ঞান, মৎস্য বিজ্ঞান, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি, ফার্মেসি, ভূগোল ও পরিবেশ, ভূতত্ত্ব বিভাগ, সমুদ্রবিজ্ঞান, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা, ফলিত পরিসংখ্যান, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবটিক্স অ্যান্ড মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীন ভৌত বিজ্ঞান বিষয়ক ও জীববিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯
এসকেবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।