বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে খুলনা মহানগরীতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তারা। দুপুরে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে মানববন্ধন করে বশেমুরবিপ্রবি সাবেক শিক্ষার্থী ফোরাম, খুলনা।
পরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের মুখপাত্র ও বশেমুরবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী সম্রাট বিশ্বাস।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর পূণ্যভূমিতে বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিন বশেমুরবিপ্রবির ভিসি পদে রয়েছেন। বিগত পাঁচবছর ধরে নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা লুটপাট, ভিসি কোটা চালু, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন তিনি। যা বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।
‘বিগত দুইবছরে দুর্নীতির কথা প্রকাশ করতে চাইলে ৩৪জন শিক্ষার্থীকে অপ্রাসঙ্গিক কারণ দেখিয়ে বহিষ্কার করেছেন ভিসি নাসির উদ্দিন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জামায়াত-শিবির, সরকার বিরোধী অপবাদ দিয়ে বাকরুদ্ধ করে রাখেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগালি করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুর পূণ্যভূমিতে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে ছাত্র-ছাত্রীর ক্ষতিসাধন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন তিনি। ’
সম্রাট বিশ্বাসের অভিযোগ, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিনিধি ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া এবং এর আগে তারেক লিটুকে বহিষ্কার করেছেন এই দুর্নীতিবাজ ভিসি। তাদের মানসিকভাবে নির্যাতনও করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে জিনিয়াকে বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অর্ঘ্য বিশ্বাসকে জীবন দিতে হয়েছে। তিনি ফেসবুকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু তাকে বহিষ্কার করা হয়। অর্ঘ্যের বাবা বহিষ্কার আদেশ তুলে নিতে অনুরোধ করলে তাকে অপমান করে বের করে দেওয়া হয়। বাবার অপমান সহ্য করতে না পেরে অর্ঘ্য আত্মহত্যা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১৯৯৪-১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেল সাদা দলের হয়ে বাকৃবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে অংশ নেন খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। কিন্তু এখন তিনি বশেমুরবিপ্রবির ভিসি।
সম্রাট বিশ্বাস বলেন, বিগত ৫ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ও শহীদ মিনার করার কথা বলে ভিসি নাসির উদ্দিন এই খাতে বরাদ্দ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ বছর আগে ভর্তি ফি ছিল ৩ হাজার টাকা, এখন তা ১৯ হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রতি সেমিস্টারে ১২ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে উন্নয়ন ফি বাবদ দেড় হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। কিন্তু সেই টাকা কোথায় খরচ হয় তা কেউ জানে না। নিজস্ব বলয় তৈরি করে তিনি দুর্নীতিসহ নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় আমরা দুর্নীতিবাজ ভিসি নাসির উদ্দিনের পদত্যাগ চাই।
কর্মসূচিতে বশেমুরবিপ্রবির সাবেক শিক্ষার্থী ফোরাম, খুলনার নেতা আদনান ফয়সাল আলিফ, আবুল হাসান আফসানা ঊষা, মোহুয়া হাসান মনিষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক শিক্ষার্থীরা বলেন, ভিসি নাসির উদ্দিন পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। এর আগেও কয়েকবার ভিসির অপসারণের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যতবার আন্দোলন হয়েছে প্রতিবারই আন্দোলনকারীদের বিভিন্নভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।
তবে এবার ভিসির পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে হুমকি দেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৯
এমআরএম/এমএ