ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নতুন সমীকরণ

শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে নতুন সমীকরণ

শাবিপ্রবি (সিলেট): শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘শাবি শিক্ষক সমিতি’র নির্বাচন সোমবার। নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নানা প্রস্তুতি ও প্রার্থীদের প্রচারণা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠিত ‘প্যানেল ভিত্তিক ঐক্যে’ চির ধরায় শিক্ষক রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ, যার প্রতিফলন ঘটতে পারে এবারের ভোটের ব্যালটে।

সোমবার (১৫ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল অডিটোরিয়ামে চলবে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এবারের ভোটার সংখ্যা ৪৫০ জন।

প্রতিবারের মতো এবারও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’, ও ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ প্যানেলের শিক্ষকরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্যানেল প্রতি বছরের মতো থাকলেও থাকছে না প্যানেলভিত্তিক ‘ভোট ব্যাংক’। গ্রুপ লিডার তথা সিনিয়র শিক্ষকদের প্রতি অনাস্থা আর মান-অভিমানে ‘প্যানেল ভিত্তিক বন্ডিং’-এ চির ধরেছে সব প্যানেলেই। অনেক শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার তারা প্যানেলের বাইরেও ‘ব্যক্তি’ হিসেবে প্রার্থীকে যাচাই করে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি প্যানেলের শিক্ষকদের মধ্যে প্রার্থিতা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে এসব গ্রুপে সাস্টিয়ান এবং নন সাস্টিয়ান শিক্ষকদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চরম আকারে। ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ প্যানেলে যুগ্ম সম্পাদক পদে এক সহকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষককে মনোনয়ন দিলেও পরবর্তীতে তাকে সরিয়ে এই পদে সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবিবকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এই ঘটনায় এ গ্রুপের শিক্ষকদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল বিদ্যমান রয়েছে।

জামায়াতি শিক্ষকদের আপত্তি সত্ত্বেও প্যানেল নাম থেকে ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ’ অংশ বাদ দেওয়ায় বিএনপি-জামায়াতপন্থী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’র শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকারে বিরাজ করছে। ফলে বিগত বছরে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সাথে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের লিয়াজোঁ করার যে গুঞ্জন উঠেছিল, বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্কেও ফাটলের ফলে এবারের নির্বাচনে সেটা ঠিকভাবে কাজ না করতেও পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’, ও ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ নির্বাচনে পালাবদল করে বিজয়ী হয়ে আসছে। কেননা দীর্ঘ ১২ বছরে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকরা সবাই আওয়মী লীগ মতাদর্শের। সেই হিসেবে তাদের ভোটের সংখ্যায় বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা একই জায়গাতে স্থির অবস্থায় রয়েছে। নতুন করে আর তেমন কোনো শিক্ষক যুক্ত হয়নি এ প্যানেলে। এ হিসেবে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও বিএনপি-জামায়াতপন্থী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ শুধু নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তবে সম্পর্কে ফাটল ধরার ফলে এবারের নির্বাচনে বিএনপিপন্থীদের সঙ্গ বাদ দিয়ে জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা নির্বাচনে নতুন ছক আঁকবেন বলে অনেকে ধারণা করছেন।

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের শেষ সময়ে এসে নিজেদের শক্ত অবস্থান তুলে ধরতে এবং প্রশাসনিক পদে নিজেদের অধিষ্ঠিত করতে এবারের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সব প্যানেলের প্রার্থীদের কাছে। আওয়ামীপন্থী দুই প্যানেলের ভোট প্রায় কাছাকাছি থাকায় এবারের নির্বাচনেও নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা আলাদা করে নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করলে বিগত বছরের থেকে এবার নির্বাচন নতুন মেরুকরণ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ প্যানেল থেকে এবার সভাপতি পদে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যিনি গত বছরও একই পদে নির্বাচন করে জয়লাভ করে বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বাস্তবায়নে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করার চেয়ে উপাচার্যের আস্থাভাজন থাকতেই বেশি চেষ্টা করেছেন বলে বিরুদ্ধ প্যানেলের শিক্ষকদের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

প্রচারণায় পিছিয়ে নেই আওয়ামীপন্থী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ থেকে সভাপতি প্রার্থী হওয়া সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস। শিক্ষক সমিতিতে বিভিন্ন পদে নির্বাচনে পূর্বে জয়লাভ করে আসছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু শিক্ষকদের একটা অংশ ভোট ব্যাংক রয়েছে তার।

আওয়ামীপন্থী বিরোধী প্যানেলে এক হিন্দু শিক্ষকের প্রার্থিতা বাতিল করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক হিন্দু শিক্ষক ক্ষুব্ধ। এক্ষেত্রে তারা তুলসি কুমার দাসকেই সভাপতি পদে অগ্রাধিকার দেবেন বলে ধারণা করছেন অনেক শিক্ষক।

আওয়ামীপন্থী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’র প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়েছেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইশরাত ইবনে ইসমাঈল। তিনি বিদেশে উচ্চ শিক্ষা শেষে অল্প কিছুদিন পূর্বে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকায় একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। তবে সে গ্যাপ কাটিয়ে উঠতে প্যানেলের সদস্যদের সহযোগিতায় চেষ্টা করছেন। এমনকি তিনি ক্যাম্পাসে এসে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেলের (আইকিউএসি) অতিরিক্ত পরিচালকের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে নিয়োগও পেয়েছেন।

অপর দিকে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মহিবুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বিগত সময়ে তিন মেয়াদে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি কেন্দ্রিক একটা ভোট ব্যাংকও রয়েছে তার। এছাড়া সিলেটি ও সাস্টিয়ান শিক্ষকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তার। বিগত সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করার শিক্ষকদের একটা বড় অংশের অনুগ্রহ তার পক্ষে রয়েছে।

বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ থেকে সভাপতি পদে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ব্যাপক প্রভাবশালী শিক্ষক হিসেবে তিনি পরিচিত থাকলেও সময়ের ব্যবধানে তার বিপরীত রূপ নিয়েছে। একই প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ মোহাম্মদ আতিকুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দীর্ঘদিন থেকে বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় তাদের ভোট ব্যাংক স্থির রয়েছে।

নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ অনেকটা নিয়ম রক্ষার্থে। তবে তারা প্রতিপক্ষ আওয়ামীপন্থী কোনো একটা প্যানেলের সাথে লিয়াজোঁ করে ফেললে ভোটের রাজনীতিতে নতুন রসায়ন যোগ হবে। তবে ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে নয়টা-বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে সকল সমীকরণের হিসেব মিলবে। এদিন রাতেই ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. জায়েদা শারমিন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২১
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।