ঢাকা: কিছুদিন আগেও উপবৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য খুশির খবর ছিল না। উপবৃত্তির সামান্য কিছু টাকা, সেটিও বিভিন্নভাবে বেহাত হয়ে যেত কিংবা ক্যাশ আউট করতে না পেরে অনেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতেন।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার অভিভাবক দিবা রাণী দাস উপবৃত্তি পাওয়ার পর জানালেন, আগে টাকা পেলেও টাকা তোলার জন্য ভোগান্তি পোহাতে হতো। এবার ‘নগদ’-এর মাধ্যমে টাকা পেয়ে তার কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি, বাড়ির পাশের দোকান থেকে তিনি ক্যাশ আউট করেছেন।
উপবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশের কোটি পরিবারের কাছে ছোট্ট ছোট্ট খুশি আর আনন্দ যেন পৌঁছে গেছে। এরই মধ্যে ১ কোটির বেশি মায়ের মোবাইলে সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষার উপবৃত্তির টাকা স্বচ্ছভাবে পৌঁছে দিয়েছে ‘নগদ’। বাড়ির পাশে ‘নগদ’ উদ্যোক্তা থাকায় সহজে, প্রয়োজন অনুসারে ক্যাশ-আউটও করে নিতে পারছেন উপকারভোগীরা।
‘নগদ’-এর মাধ্যমে উপবৃত্তি পেয়ে ফেনী সদর উপজেলার আয়েশা আক্তার বলেন, গতবারের চেয়ে এবার উপবৃত্তির টাকা বেশি। নগদ-এর মাধ্যমে তিনি টাকা পেয়েছেন এবং টাকা তুলতে তার কোনো সমস্যা হয়নি। তার চাওয়া এই প্রক্রিয়া যেন সামনের দিনেও চলমান থাকে।
এই দফায় ‘নগদ’ বিতরণ করেছে আগে থেকেই জমে থাকা ২০২০ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকের উপবৃত্তি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদের আগেই আরো দুটি প্রান্তিকের উপবৃত্তিসহ ২০২১ সালের শিক্ষা উপকরণ কেনার ভাতাও পেয়ে যাবেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা। ফলে শিক্ষার্থীদের ঈদের আনন্দ কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ২১ নম্বর করিলকোপা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা পারভিন বলেন, কিছু সরল মানুষ অন্যের কাছে ওটিপি নম্বর শেয়ার করার কারণে দুই-একটি প্রতারণার ঘটনা তার স্কুলে ঘটেছে। এ ছাড়া বাকি সবাই উপবৃত্তির টাকা পেয়েছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে গত বছর কোভিড-এর শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘নগদ’সহ আরো তিনটি এমএফএস অপারেটরের মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে ঈদের উপহার পাঠিয়েছিলেন। যেখানে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ পরিবারের কাছে সফলভাবে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পৌঁছে দিয়েছিল ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’।
প্রায় এক বছর উপবৃত্তি বিতরণ বন্ধ থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গত বছরের ডিসেম্বরে ‘নগদ’-এর সঙ্গে চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। ‘নগদ’-এর মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণের ফলে এক দিকে যেমন স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে, ভূতুড়ে সুবিধাভোগী বাদ পড়েছে এবং অন্যদিকে উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণে সরকারের খরচ এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।
বিষয়টি সম্পর্কে ‘নগদ’-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রাহেল আহমেদ বলেন, দেশের মানুষকে আরামপ্রদ ও সহজ উপায়ে টাকা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে ‘নগদ’-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। এর আগে যেভাবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া হতো, সেখানে সরকারের খরচ হতো ২১ টাকা। এখন সেই খরচ ৭ টাকায় নেমে এসেছে। সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন হয়েছে, সেটি হলো সুবিধাভোগীদের কাছে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
‘নগদ’-এর সিইও রাহেল আহমেদ আরও বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে যারা সরকারি সহায়তা উপভোগ করছেন, তাদের সচেতন করতে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা প্রত্যেক উপকারভোগীর কাছে আলাদা করে ফোন করে সচেতন করার জন্য ভয়েস কল ও মেসেজ দিয়েছি। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করছি, সরকার ও গণমাধ্যমেরও এ বিষয়ে দায়িত্ব আছে বলে আমি মনে করি। ’
সরকারের খরচ কমে নামল একতৃতীয়াংশে
এর আগে গত কয়েক বছর ধরে শিওর ক্যাশ নামের একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করত সরকার। সারা দেশে এজেন্ট না থাকা, ক্যাশ-আউটের বাড়তি খরচ, সঠিক ব্যক্তির কাছে উপবৃত্তি না পৌঁছানো, সরকারের বাড়তি খরচসহ নানান অনিয়ম ও বিতর্কের পর ‘নগদ’-কে দায়িত্ব দেয় সরকার।
এর আগে প্রতি হাজার টাকার উপবৃত্তি বিতরণ করতে সরকারের কাছ থেকে সাড়ে ২১ টাকা করে সার্ভিস চার্জ এবং ক্যাশ-আউট চার্জ নিত শিওর ক্যাশ। কিন্তু সেখানে ‘নগদ’ সব মিলে সরকারের কাছ থেকে নিচ্ছে হাজারে মাত্র সাত টাকা। সুবিধাভোগী মূল টাকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাশ-আউটের খরচও পেয়ে যাচ্ছেন, ফলে গ্রাহককে বাড়তি কোনো অর্থ খরচ করত হচ্ছে না। শুধু ভাতা বিতরণে এই প্রক্রিয়ায় সরকারের অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে।
নেই ভূতুড়ে সুবিধাভোগীর অভিযোগ
দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই সকল শিক্ষার্থীর নাম, জন্ম নিবন্ধন সনদসহ শিক্ষার্থীর মা অথবা অন্য কোনো অভিভাবকের মোবাইল নম্বরের সঙ্গে মিলিয়ে একটি ডেটাবেজ তৈরি করেছে ‘নগদ’। ফলে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ভুয়া সুবিধাভোগীর নাম এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়েছে। এতে জাতীয় রাজস্বেরও অপচয় রোধ হয়েছে।
সচেতনতা বাড়াতে ‘নগদ’-এর আইভিআর কল
নানা সময় সহজ-সরল সুবিধাভোগীর কাছ থেকে নানান অপকৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে কিছু কুচক্র। এবারও একই প্রচেষ্টা অব্যহত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সুবিধাভোগীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতিটি সুবিধাভোগীর মোবাইলে সচেতনতার বার্তা দিয়ে কল করছে ‘নগদ’।
এসএমএস পাঠালে অনেক ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী সেটি নাও পড়তে পারেন সে কারণে একটি আইভিআর কলের মাধ্যমে তাদের জানানো হচ্ছে যে, কোনো অবস্থাতেই ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের পিন, ওটিপি বা পাসওয়ার্ড কাউকে দেওয়া যাবে না। ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টের পিন, ওটিপি বা পাসওয়ার্ড দিয়ে দিলে উপবৃত্তির অর্থ বেহাত হয়ে যাওয়ার আংশকা থাকে।
‘নগদ’ একইসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, ‘নগদ’-এর পক্ষ থেকে কখনোই গ্রাহকের কাছে পিন, ওটিপি বা পাসওয়ার্ড জানতে চাইবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২১
এসই/এজে