রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নিয়োগ দেওয়ার আশ্বাসে শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবাহানের আস্থাভাজন বলে পরিচিত পরিবহন দপ্তর প্রশাসক ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এফএম আলী হায়দারের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে।
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের বিষয়ে এক নারীর সঙ্গে তাকে আলাপ করতে শোনা যায়। অডিওতে ওই নারীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপ ও অনৈতিক প্রস্তাব দিতেও শোনা যায়। ফেসবুকে কয়েকটি গ্রুপে এটি আপলোড করা হয় যেখানে পুরুষ কণ্ঠটি ড. এফএম আলী হায়দারের বলে দাবি করা হচ্ছে। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কথোপকথনকারী ওই নারীর পরিচয়ও জানা যায়নি।
অডিও রেকর্ডে ওই নারীর সঙ্গে আলী হায়দারের অন্তরঙ্গ আলাপ করতে শোনা যায়। কথোপকথনের একপর্যায়ে ওই নারীকে বলতে শোনা যায়- চাকরিটা আমার খুব দরকার, আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সবার আর্থিক অবস্থা ভালো। শুধুই আমার আর্থিক অবস্থা খারাপ।
নীচে তাদের কথোপকথন তুলে ধরা হলো:
কথোপকথনের শুরুতে ওই নারী ড. আলী হায়দারকে সালাম দেন। এখান থেকে তাদের আলাপ শুরু হয়।
আলী হায়দার: খেলা দেখছি।
নারী: খেলা দেখছেন?
আলী হায়দার: হুম। তোমার মোবাইলে কি শব্দ বেশি নাকি?
নারী: না।
আলী হায়দার: সাইলেন্ট করে রাখা লাগবে।
নারী: আমার পাশে বাচ্চা ঘুমাচ্ছে।
আলী হায়দার: মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখা লাগবে। ভাইব্রেশন দিয়ে রাখা লাগবে। মেয়েটা কোথায়?
নারী: ঘুমাচ্ছে আমার পাশে আছে।
আলী হায়দার: কি অবস্থা বল। শুনতে পাচ্ছে আমাদের কেউ?
নারী: সবাই ঘুমাচ্ছে। নীরব।
আলী হায়দার: কি অবস্থা বল।
নারী: একবার আমি ভাবলাম আপনার ওখানে যাবো। পরে..(অস্পষ্ট)..আর গেলাম না।
এরপর থেকে তাদের মধ্যে অশ্লীল ও প্রকাশ অযোগ্য কথোপকথন শুরু হয়। একপর্যায়ে আলী হায়দার ওই নারীকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আলাপ চলতে থাকে।
কথোপকথনের একপর্যায়ে চাকরিতে নিয়োগের বিষয়ে তাদের মধ্যে আলাপ হয়।
আলী হায়দার: তোমার বাবার বাড়ি কোথায়?
নারী: আমার বাবার বাড়ি হেতেম খাঁ। একেবারে বাজারের সামনে; কাস্টমস অফিসের সামনে। আমার ফ্যামিলি খুবই ভালো। আমার ফ্যামিলি অনেক বড়লোক। কিন্তু আমারই কপাল খারাপ। আমার বড় বোনের স্বামী পানি উন্নয়ন বোর্ডে, মেজটার স্বামী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। আমারই খালি কপাল খারাপ। ফ্যামিলি তো খেতে দেবে না। সারা জীবন চলতে হলে ফ্যামিলি তো দেবে না।
একপর্যায়ে ওই নারী বলেন, 'এই কারণেই বলছি আমার চাকরিটা খুব জরুরি। ,
এর জবাবে আলী হায়দার বলেন, 'হ্যাঁ দিয়ে দেব, দিয়ে দেব। ' এরপর থেকে তাদের মধ্যে ফের অশ্লীল আলাপ চলতে থাকে।
একপর্যায়ে আলী হায়দার বলেন, 'কাল তুমি আমার ডিপার্টমেন্টে আস। তোমাকে দেখব। '
নারী: অফিসের ভেতরে না। সবাই হুট করে চলে আসে। হুট করে ঢুকে পড়ে।
আলী হায়দার তাহলে রোববার দিন, ঠিক আছে?
নারী: রোববার দিন।
আলী হায়দার: তুমি আবার কাউকে বলিও না।
নারী: না না। মানসম্মানের বিষয়... আমি মানসম্মান অনেক ভয় পাই।
আলী হায়দার: আচ্ছা। কেটে দাও।
নারী: আচ্ছা ঘুমান। সকালে আবার উঠতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ড. এফএম আলী হায়দার বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের আস্থাভাজন বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত। অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান প্রথম মেয়াদে উপাচার্য হওয়ার পর আলী হায়দারকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর ২০১৭ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে অধ্যাপক আব্দুস সোবহান পরিবহন দপ্তর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেন আলী হায়দারকে। কয়েক মাস আগে তিনি পরিবহন দপ্তর প্রশাসকের দায়িত্ব শেষ করেছেন।
ফোন রেকর্ডিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. এফএম আলী হায়দার বলেন, এগুলো আমার কথা না। কার কি রেকর্ড আমার নামে চালিয়ে দিয়েছে। আমি এখনো এসব রেকর্ড নিজ কানে শুনিনি। আমি অনিয়ম বা দুর্নীতি করিনি। পরিবহন দফতরের দায়িত্বে ছিলাম। দুর্নীতি করেছি কেউ বলতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি কারও সঙ্গে টাকার লেনদেন করিনি। কাউকে ক্যাম্পাসে চাকরিও দেইনি। উপাচার্য অধ্যাপক সোবহান যাওয়ার সময় যে ১৪১ জনের নিয়োগ দিয়েছে তাতে আমার কেউ চাকরি পায়নি। অনেকে বলে আমি চাকরি দিয়ে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছি। আসলে এসব ভুয়া। উপাচার্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল, তাই কেউ ষড়যন্ত্র করে এগুলো করেছে।
তবে এফএম আলী হায়দারের সহকর্মীরা বলছেন অডিও রেকর্ডটি তার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, রেকর্ডটি আমি শুনেছি। আলী হায়দারের কণ্ঠ আমি চিনি। তাকে যতটুক চিনি বা তার কণ্ঠ যতটুক চিনি এতে রেকর্ডের ওই কণ্ঠটি আলী হায়দারের বলে আমার মনে হয়েছে। কারণ প্রত্যেকটা মানুষের কথায় আঞ্চলিকতার টান থাকে, ভয়েসের ফ্রিকোয়েন্সি থাকে যা আরেকজন চাইলেই সহজে নকল করতে পারে না। আমার কাছে সেটা আলী হায়দারের কণ্ঠ বলেই মনে হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২১
আরএ