ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: গেল বছর মার্চে আকস্মিকভাবে দেখা দেয় করোনা ভাইরাসের আক্রমণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দেওয়া হয় লকডাউন।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৮ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যার কারণে শিক্ষার্থীরা ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়। শিক্ষার্থীদের অনেকে টিউশনি করে নিজের খরচ বহন করলেও করোনার কারণে সেটির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উল্টো বাড়িতে থাকার কারণে পরিবারের খরচও বহন করার চাপ তৈরি হয়।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতিতে প্রথমে বিপাকে পড়লেও পরবর্তীতে কেউ পরীক্ষামূলক, কৃষি, পাখি ও মুরগির খামার, অনলাইন কেন্দ্রিক বিজনেস করে আর্থিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।
করোনার মধ্যে অনেকে উদ্যোক্তা হয়েছেন। ২০২০ সালের জুন মাসে ঢাবিয়ান বিজনেস কমিউনিটি নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলা হয়। যেখানে এখন ২৬ হাজার সদস্য রয়েছেন। গ্রুপটির মাধ্যমে অনেকে নিজ এলাকার বিক্রিযোগ্য দ্রব্যাদি নিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নাম লিখিয়েছেন।
২০১৭-১৮ বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ খান আবির করোনার কারণে দীর্ঘদিন গ্রামে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা শুনে চলতি বছরের শুরুতে ঢাকায় আসে কিন্তু করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ক্যাম্পাস খোলার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হলে আবারো গ্রামে ফিরে যায়। শহরে টিউশনি করে চললেও গ্রামে টিউশনে না পাওয়ায় বর্তমানে তিনি আমের ব্যবসা করছেন।
আবার কেউ কেউ নিজ এলাকায় কোনো না কোনো কাজে নিজেকে যুক্ত করেছেন। আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান করোনার শুরু থেকে সিরাজগঞ্জে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। বর্তমানে তিনি তাঁতের কাজ করে সংসারের হাল ধরেছেন।
ঢাকায় যারা অবস্থান করছেন তারা ইন্টারনেট সুবিধাকে কাজে লাগাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, করোনার প্রথম দিকে বাড়িতে টিউশন পাইনি। ভর্তি পরীক্ষার্থী পেয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় সেসব শিক্ষার্থীরা পড়তে আগ্রহী হয়নি। সেকারণে ঢাকায় চলে আসি। আগে থেকে ফ্রিল্যান্সিং এর কিছু কাজ জানতাম। সেটিকে কাজে লাগিয়ে মাসে কিছু ডলার ইনকাম করে নিজের খরচ চালাই। আর কখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে সেই আশায় আছি।
কেউ কেউ বিভিন্ন রিসার্চ প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। পার্ট টাইম হিসেবে বিভিন্ন সংস্থায়ও ঢুকেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ওসমান গণি বাংলানিউজকে বলেন, করোনায় বসে না থেকে বিভিন্ন জায়গায় সিভি পাঠিয়েছিলাম। এখন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে জয়েন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে ছেড়ে দেবো।
যাদের আর্থিক সমস্যা নেই তাদের অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে নিজের কো-কারিকুলাম এক্টিভিটি সমৃদ্ধ করছেন। আবার প্রশিক্ষণমূলক কোর্সে (যেমন ভাষা শিক্ষা, কম্পিউটার শিক্ষা) ব্যস্ত রাখার পাশপাশি চাকরির প্রস্তুতি নিয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাইহান উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সামনে পরীক্ষা হবে। সেটির প্রস্তুতি নিই আর অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স করি। যেগুলো ভবিষ্যতে কাজে দেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২১
এসকেবি/এএটি